মণ্ডপে ফিনিক্স পাখির মডেল তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র
স্বাধীন ভারতের প্রথম দুর্গাপুজো কেমন ছিল? তখন বারোয়ারির এত রমরমা ছিল না। কিন্তু উৎসবে মিশে ছিল ছিন্নমূল মানুষের বিষাদের সুর!
স্বাধীনতার এত বছর পরে ফের সেই ছিন্নমূল হওয়ার আশঙ্কা গেড়ে বসছে মানুষের মনে। কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি-র জেরে আবার ভিটে হারানোর আশঙ্কা কুরে কুরে খাচ্ছে অনেককে। তাই আনন্দের উৎসবে সেই ভিটে হারানোর যন্ত্রণা এ বার ফুটে উঠছে শহরে। সেখানে হেরে যাওয়া নয়, ভিটেমাটি হারিয়েও মানুষের বাঁচার লড়াই তুলে ধরছে কসবার রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘ।
পুজোকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্তকুমার ঘোষ বলছেন, ‘‘আমাদের থিমের পোশাকি নাম ‘উদ্বাস্তু— একটি ফিনিক্স পাখির নাম’।’’ তিনি জানান, গোটা পৃথিবীতেই যে ভাবে উদ্বাস্তু সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে, সেটাকেই তুলে ধরছেন শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গেই থিমের অংশ হয়েছে এনআরসি। যা নিয়ে তোলপাড় দেশের রাজনীতি।
এ পুজোর কর্তা সুশান্ত রাজনীতির লোক। তাঁর দল এনআরসি-র বিরোধিতা করে এসেছে। ফলে রাজনীতি কি কোথাও পুজোর থিমে ঢুকছে? সুশান্ত বলছেন, ‘‘শুধু এনআরসি তো থিম নয়। উদ্বাস্তু সমস্যা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সব কিছুর একটি অংশ হিসেবে এনআরসি এসেছে।’’ তিনি এ-ও বলছেন, ‘‘রাষ্ট্রের নির্দেশে ভিটে হারালেও প্রতিকূলতাকে জয় করে উদ্বাস্তুরা ফের নতুন জীবন গড়েছেন। এখানেও সেই জয়কেই তুলে ধরা হবে।’’
সিরিয়া হোক কিংবা মায়ানমারের রোহিঙ্গা, রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে উদ্বাস্তুরা যেন ব্যাডমিন্টনের শাটল কক। তাঁদের এক দেশ ঠেলে দেয় অন্য দেশের দিকে। সেই ঠেলাঠেলির মাঝেই কেটে যায় গোটা জীবন। রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘের মণ্ডপে ‘উদ্বাস্তু’ থিমের প্রতীক তাই শাটল কক। এর পাশাপাশি থাকছে ব্যাডমিন্টনের র্যাকেটও। সুশান্ত বলছেন, ‘‘অনেকেই হয় তো জানেন না উলুবেড়িয়ায় শাটল কক তৈরির বিরাট হাব রয়েছে। সেখান থেকে বিদেশেও শাটল কক রফতানি হয়। উলুবেড়িয়া থেকেই শাটল কক এসেছে আমাদের মণ্ডপে।’’
তবে শুধু কক বা র্যাকেট নয়, রাজডাঙা নব উদয়ের মণ্ডপে লোহার কাঠামোও থাকছে। মণ্ডপের শুরুতেই বিরাট ক্রেনে পৃথিবীকে যেন তুলে ধরা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন ভাবে বেঁচে ওঠার প্রতীক যে পাখি, সেই ‘ফিনিক্স’-এর বিরাট একটি মডেলও থাকছে মণ্ডপে।
উদ্বাস্তু সমস্যা বারবার ফিরে এসেছে বাংলা সাহিত্যে, সিনেমায়। শুধু তা-ই নয়, প্রজন্ম বদলালেও সেই তকমা বদলায়নি। তাই কখনও গোলমালে কিংবা নেহাতই নিরামিষ আড্ডাতেও দেশভাগের বহু বছর পরে আজও অনেক ছিন্নমূল পূর্ববঙ্গীয়কে ‘উদ্বাস্তু’-র খোঁটা শুনতে হয়
এই শহরেই।
শারদোৎসবের শহর কি সেই জ্বালায় প্রলেপ দেবে?