খেলা: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে চলছে ফুটবল। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মধ্য কলকাতায় গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে দিন কাটত কিশোরী সুজাতার (নাম পরিবর্তিত)। বাবা, মা, দাদা— তিন জনই এইচআইভি পজিটিভ। কিন্তু সুজাতা ও তার দিদি তাতে আক্রান্ত ছিল না। এক দিন একটি সংস্থা সুজাতাকে পৌঁছে দেয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে। সেখানে তাদের কাছেই প়ড়াশোনা শুরু হয় মেয়েটির। আজ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সুজাতা।
শুধু সে-ই নয়, সেখানে রয়েছে মুনমুন, হাসি, মনীষা, সুস্মিতা, স্নেহার মতো আরও অনেকে। এরা সকলেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কারও মা বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কারও আবার বাবা মারা যাওয়ার পরে সৎবাবা এমন অত্যাচার করতেন যে, ঠাকুরমা তাকে নিয়ে চলে আসেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এদের সকলেরই এখন দিনের অনেকটা সময় কাটে ফুটবল, নাচ-গান বা ছবি আঁকার মতো নানাবিধি চর্চায়। দক্ষিণ কলকাতার মতিলাল নেহরু রোডের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গত দু’বছর ধরে এ ভাবেই শহরের বহু দুঃস্থ মেয়ের দেখভাল করছে। এত দিন সকলকেই রাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত। সোমবার থেকে এই কেন্দ্রে শুরু হল রাতে থাকার ব্যবস্থাও।
ওই হোম সূত্রের জানা গিয়েছে, রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর আপাতত সেখানে ২৫ জনকে রাখার অনুমতি দিয়েছে। পরে সংখ্যাটি ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে। এ দিন ওই হোমের উদ্বোধন করেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই হোমগুলির উদ্দেশ্য, অবহেলিত শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত করা। পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে বড় করে তোলা। সেই উদ্দেশ্যেই সরকারের তরফে এদের অর্থসাহায্যও করা হয়।’’ মেয়েদের বৃহত্তর সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা যে কখনওই এই হোমগুলির উদ্দেশ্য নয়, সে কথাও জানান তিনি। বর্তমানে রাজ্যে মোট ৩৩টি এ ধরনের ‘শেল্টার হোম’ রয়েছে। যার মধ্যে কলকাতায় আছে ১৭টি।