অনিয়ম: বড় বক্স ও তীব্র আলো নিয়ে চলছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার রাতে, বালিতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কালীপুজো ঘিরে বাজির তাণ্ডবে কানে তালা লাগার পরিস্থিতি হয়েছে গত কয়েক দিনে। একাধিক এলাকা থেকে বাজির দাপটে নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ এসেছে। অথচ, পুলিশি পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধরপাকড়ের সংখ্যা কম। যেখানে গত বছরই বেআইনি বাজি ফাটানোর দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন ৭২০ জন, চলতি বছরে সেখানে গ্রেফতার হয়েছেন ৪৮০ জন!
এতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পুলিশি ধরপাকড়ে বাজি ঘিরে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব ছিল? তবে কি কড়া হাতে গ্রেফতারির বদলে ‘বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের’ পথে হেঁটেছে পুলিশ?
দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে বাজির জেরে গ্রেফতারির সংখ্যা ছিল সব চেয়ে বেশি। সে বার ধরা হয়েছিল ৭৫৮ জনকে। তবে ২০২০ সালে পুলিশি গ্রেফতারি তিনশোও পেরোয়নি। কিন্তু বাহিনীরই একাংশের দাবি, সে বার ভরা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কালীপুজো হয়েছিল। সব রকমের বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করেছিল আদালত। কিন্তু অন্য তিন বছর এমন কড়া নির্দেশিকা ছিল না। ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ বাজি ছাড়া অন্যান্য বাজি রাত ৮টা-১০টা পর্যন্ত ফাটানোয় ছাড় ছিল। ২০২১ এবং চলতি বছরেও রাত ৮টা-১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজিতে ছাড় ছিল। বাকি সব বাজিই ছিল নিষিদ্ধ। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের নির্দেশের পরেও এ বছর যে হারে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে, সেখানে গ্রেফতারির সংখ্যা এত কম হয় কী করে? লালবাজারের কেউই অবশ্য এর উত্তর দিতে চাননি। সেখানকার এক কর্তা দাবি করেছেন, ‘‘যেখানেই চোখে পড়ছে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ বার বাজি ফাটানোর অভিযোগ অনেক কম!’’ পরিবেশকর্মীদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কেন অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষা করবে?’’ তাঁরা এ-ও বলছেন, তাঁদের কাছেই যেখানে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর প্রচুর অভিযোগ এসেছে, সেখানে পুলিশের কাছে আরও বেশি অভিযোগ পৌঁছনোর কথা।
শুক্রবার কালীপুজোর বিসর্জনের শেষ দিনেও এই বাজির দাপট বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। বেশ কয়েকটি বড় পুজো কমিটির আবেদন মেনে বিসর্জনের সময় এক দিন বাড়ানো হয়। ফলে এ দিনই শহরের বেশির ভাগ কালী প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। বিসর্জনের জন্য সব চেয়ে বেশি চাপ ছিল বিবেকানন্দ রোড এবং বিডন স্ট্রিটে। এর পরেই ছিল অরবিন্দ সরণি, গ্রে স্ট্রিট এবং স্ট্র্যান্ড রোড। এ দিন বিসর্জনে বাড়তি পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় সব রাস্তার মোড়েই উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের দেখা গিয়েছে। ঘাটেও ছিল নজরদারি। কয়েকটি পুজো কমিটির শোভাযাত্রা থামিয়ে সেখানেই সাউন্ড বক্স খোলাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। ভাসানে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর জন্য আটকও করা হয়েছে।
অভিযোগ, রাত বাড়তে এই নজরদারিই কিছুটা হালকা হতে শুরু করে। সেই সময়েই আমহার্স্ট স্ট্রিট, বৌবাজার এবং খিদিরপুরের বেশ কয়েকটি প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরোয়। প্রবল যানজটে নাজেহাল অবস্থা হয় পথচলতি অনেকের। গিরিশ পার্কের কাছে শোভাযাত্রার পিছনে আটকে থাকা এক অটোযাত্রী বললেন, ‘‘প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে দ্বিগুণ ভাড়ায় অটো পেয়েছি। সামনে শোভাযাত্রা থামিয়ে বাজি ফাটানো হচ্ছে।’’ একই পরিস্থিতি রবীন্দ্র সরণিতেও। শব্দবাজি ফাটাতে ব্যস্ত এক যুবক বললেন, ‘‘আওয়াজ আর আলো না হলে কি কালীপুজোর বিসর্জন মনে হয়!’’
এ দিনও তো সেই বিধি ভঙ্গেরই চিত্র? রাস্তায় কর্তব্যরত লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ‘‘গ্রেফতারি কম হলেও এ বার অন্য ভাবে কড়া বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, বাজি সংক্রান্ত বাড়াবাড়ি দেখলেই বিস্ফোরক আইনের ৯বি (১) (সি) ধারায় মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল থানাগুলিকে। তিন বছর পর্যন্ত হাজতবাস ও মোটা অঙ্কের জরিমানা রয়েছে ওই আইনে। এ ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই কড়া আইন ‘ওষুধ’ হিসাবে ব্যবহার করে কাজ হবে কি? উত্তর মিলবে ছটপুজোয়।