প্রতীকী ছবি।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা তো দূর অস্ত্, গায়ে গায়ে দাঁড়িয়েই চলছে বিক্রিবাটা। দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বিভিন্ন বাজারের এমন ছবি দেখে মনে হতে পারে, ওই এলাকায় হয়তো করোনার প্রকোপ ছিল না কোনও দিনও!
দেশে ফের করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। বেশ কিছু শহরে ইতিমধ্যেই কোথাও লকডাউন কোথাও নৈশ কার্ফু জারি হয়ে গিয়েছে। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক থেকে গবেষকেরা। সেই মতো দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাজারগুলিতে পুরকর্মীরা এখনও কোভিড-বিধি মেনে চলার প্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রচারেই নামমাত্র প্রশাসনিক তৎপরতা। মানুষের বিধি না মানার কথা মেনে নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রচারের পরেও স্থানীয়দের একটি অংশের হুঁশ ফিরছে না।
গোরাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারে এক চিলতে আনাজের দোকানে কমপক্ষে জনা পনেরো ক্রেতার ভিড়। কারও কারও মুখ মাস্কহীন। গায়ে গায়ে ঠেসাঠেসি করে দাঁড়িয়ে আনাজ দরদাম করতে ব্যস্ত তাঁরা। পাশের চায়ের দোকানের ছবিটাও একই রকম।
মুখে মাস্ক নেই কেন? প্রশ্ন শুনে স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম সাহার যুক্তি, ‘‘এখন তো করোনা তেমন হচ্ছে না। তা ছাড়া এই গরমে মাস্ক পরে বাজার করা কঠিন।’’ ভোলা মণ্ডল নামে এক বিক্রেতা জানালেন, সঙ্গে মাস্ক থাকলেও বিক্রির সময়ে ক্রেতা কথা বুঝতে পারেন না, তাই খুলেই রেখেছেন তিনি।
তবে শুধু গোরাবাজার এলাকাই নয়। দু’নম্বর মতিলাল বাজার, নাগেরবাজার মোড়, কালিন্দী, সুভাষনগর, দমদম রোড সংলগ্ন রাস্তার ধারের বাজারগুলির ছবি আরও করুণ। অল্প জায়গায় সেখানে দোকানের মালপত্র গাদাগাদি করে রাখা। দিনভর ক্রেতাদের ভিড়ে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার বালাই নেই।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে পুরসভা।’’ আরও এক বিদায়ী কাউন্সিলর প্রবীর পাল জানান, সংক্রমণ রুখতে পুর এলাকার বাজারগুলিতে ফের মাস্ক বিলি, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সচেতনতার প্রসারে জোর দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল এবং ব্রিগেডে একাধিক রাজনৈতিক দলের বিপুল জনসভা— কিছুই বাদ যায়নি। তখন সংক্রমণের কথা ভাবা হয় না কেন? তবে অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলে নিজের সচেতনতার অভাবকে আড়াল করার এই যুক্তিও মানতে নারাজ বাসিন্দাদের অন্য অংশ। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘প্রশাসন সক্রিয় হলেইকোভিড-বিধি মানবেন সকলে। না-হলে কিছুতেই এক দল লোককে বোঝানো যাবে না।’’
তবে দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বারবার বলা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের অনেকেই নিয়ম মানছেন না। তাই তাঁরা সচেতন না হলে করোনা প্রতিরোধের কাজ আরও কঠিন হবে বলে মনে করছে পুরসভা।