ছুটি-ছুটি: করোনার তোয়াক্কা না করে মাস্কহীন ভিড় ময়দানে। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কোভিডের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে শহরের দর্শনীয় স্থানগুলি। যদিও এক শ্রেণির মানুষের বেপরোয়া উৎসব-যাপন তাতে বন্ধ হয়নি। চিড়িয়াখানা বা মিলেনিয়াম পার্কের বদলে বুধবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের সকাল থেকেই দেখা গেল, পিকনিকের নামে প্রবল ভিড় ময়দান চত্বরে। বাদ যায়নি ইএম বাইপাসের বিভিন্ন ভেড়ি সংলগ্ন একাধিক পিকনিক স্পট-ও। এর পাশাপাশি, এ দিন ভিড় আছড়ে পড়েছে শহরের শপিং মল ও বাজারগুলিতেও। যা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক মহলের একটি বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ওমিক্রনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এই বেপরোয়া উৎসব-যাপনের জেরে ফের রূপ ও গোত্র বদলে ফিরে আসবে না তো করোনাভাইরাস?
এ নিয়ে অবশ্য হুঁশ রয়েছে বলে মনে হল না বেলার দিকে ময়দানে দল বেঁধে পিকনিক সারতে ব্যস্ত জনা আটেকের একটি দলের। তাঁদের কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। প্রশ্ন করায় ওই দলের এক জন বললেন, ‘‘দিনকয়েক আগে একটু সর্দি-জ্বর হয়েছিল। এমনিই সেরে গিয়েছে। চিকিৎসক করোনা পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি করাইনি। যে জিনিস ঘরে বসে থাকলেই সেরে যায়, তা নিয়ে ভাবনার কী আছে?’’ ইএম বাইপাসের একটি ভেড়ির ধারে দেখা গেল, ‘পিকনিক পার্টি’র গাদাগাদি ভিড়। তারস্বরে বক্স বাজিয়ে নাচ-গান চলছে সেখানে। মাস্ক পরে থাকা তো দূরের কথা, দূরত্ব-বিধি মানারও বালাই নেই। হাত জীবাণুমুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা কি আছে? লাইন দিয়ে মাটিতে বসেই শালপাতায় খেতে শুরু করা এক ব্যক্তির উত্তর, ‘‘পিকনিকের মধ্যে অত নিয়ম পালন করা যায় না। করোনার ভয়ে এই শীতটা নষ্ট করব নাকি!’’
একই রকম ভিড় দেখা গেল গঙ্গার ধার এবং নিউ টাউনের একাধিক পিকনিক স্পটে। বিকেলের দিকে পিকনিক-ফেরত জনতাকে দেখা গেল, করোনা-বিধি হেলায় উড়িয়ে গাদাগাদি করে এক লরিতেই চড়ছেন। সিগন্যালে দাঁড়ানো তেমনই একটি লরির যাত্রীদের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠল, ‘‘এক, দুই, তিন— করোনা এখন ক্ষীণ!’’
ভিড়ের নিরিখে পিকনিক স্পটের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে শপিং মলগুলি। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং পার্ক সার্কাসের একটি শপিং মলে এ দিন ভিড় ছিল সব থেকে বেশি। দু’টি মলেই ৭০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ এসেছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। রাজডাঙা মেন রোডের একটি শপিং মলে আবার ভিড় টানতে আলাদা করে ‘প্রজাতন্ত্র দিবসের অফার’ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিবার নিয়ে সেখানে হাজির এক মহিলার যা নিয়ে মন্তব্য, ‘‘অফিস ছুটি থাকার এই সব দিনে কেউ কি ঘরে বসে থাকে! পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার তেমন জায়গাও খোলা নেই। তাই শপিং মলই ভরসা। এর মধ্যে অফার হচ্ছে বাড়তি পাওনা।’’ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে হাজির কলেজপড়ুয়া সুনয়না ঘোষের আবার দাবি, ‘‘দিদিমার করোনা হয়েছিল। পাঁচ দিন পরিবারের সকলে আইসোলেশনে ছিলাম। ভাল ব্যাপার হল, আজই সেই আইসোলেশনে থাকার সময় শেষ হয়েছে।’’
সাধারণ মানুষের এই অসচেতনতা নিয়ে চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, ‘‘করোনার কোন গোত্র আমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা তা জানি না। সপ্তাহ দুয়েক আগের মতো পরিস্থিতি না হলেও এখনও ভয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কলকাতা থেকে এ বার সংক্রমণ জেলার দিকে ছড়াতে পারে। তার থেকেও বড় বিষয়, ওমিক্রনের সংক্রমণ কোন পর্যায়ে কী ভাবে আমাদের মধ্যে রয়ে যাচ্ছে, তা এখনও নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। এই পরিস্থিতিতেও উৎসবই যাঁদের কাছে শেষ কথা, তাঁদের কিছু বলার নেই।’’
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার আবার বললেন, ‘‘কম বয়সিদের মধ্যে ওমিক্রন সে ভাবে প্রভাব ফেলতে না পারলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব মারাত্মক হচ্ছে। সব দিক থেকে ভাল থাকতে আগামী এক মাস সচেতন হয়ে চলা ছাড়া উপায় নেই। বাড়ির বয়স্কদের কথা ভেবে সতর্ক হওয়া খুব প্রয়োজন।’’ সেই সতকর্তা দেখা যাবে কবে? আরও একটি ছুটির দিনেও সেই উত্তর মিলল না।