COVID-19

Coronavirus in West Bengal: করোনা বিধি শিথিল হতেই বাঁধনছেঁড়া ভিড় মল, বাজারে, বেপরোয়া মনোভাব জনতার

দিনভর শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে মনে হল না, মাস্ক পরার সতর্কবার্তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল আছে। আর দূরত্ব-বিধি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৫৫
Share:

ঠাসাঠাসি: করোনা সংক্রান্ত নিয়মকানুন শিথিল হওয়ার পরে প্রথম রবিবারেই উপচে পড়ল ভিড়। বেশির ভাগের মুখ থেকে উধাও মাস্কও। নিউ মার্কেটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

কোনও শপিং মলে দিনে লোকের উপস্থিতি এক লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। কোনও শপিং মলে কিছু ক্ষণ অন্তর কার্যত আছড়ে পড়েছে জনস্রোত। কোথাও আবার বাজারে চৈত্র সেলের নামে প্রবল ভিড়! করোনা সংক্রান্ত প্রায় সব বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরে প্রথম রবিবার শহরের শপিং মল এবং বাজারগুলির চিত্র ছিল এমনই। যা দেখে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘করোনা কমলেও পুরো চলে যায়নি। এখনও মাস্ক পরা এবং দূরত্ব-বিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। বিধিনিষেধ শিথিল করা অবশ্যই খুশির কথা। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, ইচ্ছে মতো উৎসব-যাপন করা যাবে।’’

Advertisement

যদিও দিনভর শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে মনে হল না, মাস্ক পরার সতর্কবার্তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল আছে। আর দূরত্ব-বিধি? বেপরোয়া জনতার মনোভাবে স্পষ্ট, সে সব মেনে চলায় কেউ কেয়ার করছেন না। দুপুরে সব থেকে বেশি ভিড় চোখে পড়ল গড়িয়াহাট চত্বরে। সেখানে চৈত্র সেলের দোকান দেওয়া এক হকার বললেন, ‘‘অবশেষে একটা মনের মতো পয়লা বৈশাখ আসতে চলেছে। গতকাল প্রচুর ভিড় হয়েছিল। আজ সেই রেকর্ডও ভেঙে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এই শুভক্ষণে করোনার নাম না করাই ভাল।’’ সেখানেই দাঁড়ানো এক ক্রেতার মন্তব্য, ‘‘গত দু’বছর সব উৎসবের আগেই ভয়ে ভয়ে কেনাকাটা সেরেছিলাম। এ বার কোনও ভয়ই নেই। আদতে বাঙালি ভাগ্যবান, তাই বাংলা নববর্ষের আগেই সব বিধিনিষেধ উঠে গেল!’’

বিকেলের পরে একই রকম ভিড় দেখা গেল হাতিবাগান বাজারে। সেখানে সন্ধ্যার দিকে ভিড় এত বেড়ে যায় যে, বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন করতে হয় বড়তলা এবং শ্যামপুকুর থানা থেকে। সেখানকার একটি শাড়ির দোকানে ক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে তর্ক থামিয়ে মালিক বললেন, ‘‘এত দিনে বাজার উঠেছে। ভয়ে ভয়ে এত দিন যেমন খুশি দামে সব ছাড়তে হচ্ছিল। এ বার আর সেই ব্যাপার নেই।’’ ওই দোকানেরই এক কর্মী আবার বললেন, ‘‘করোনায় কাজ চলে গিয়েছিল। মালিক আবার ডেকে কাজ দিয়েছেন। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরে এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’

Advertisement

ভিড়ের নিরিখে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলল শপিং মলগুলির মধ্যেও। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলের প্রধান ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘রেস্তরাঁ খোলা রাখার সময় বেড়ে গিয়েছে। সিনেমা হলেও লোক বাড়ছে। সব মিলিয়ে শনিবার আমাদের মলে ৯০ হাজার লোক এসেছিলেন। রবিবার রাত আটটা পর্যন্ত সেই সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সামনের শনি-রবিবার বাংলা নববর্ষের আগে যা আরও বাড়বে।’’ ওই শপিং মলে গাদাগাদি ভিড়ের মধ্যে নতুন পণ্যের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সঞ্চালিকাকে আবার বলতে শোনা গেল, ‘‘মাস্ক খুলে ঘোরা যাচ্ছে, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে! সরকারকে ধন্যবাদ এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।’

এমনই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য শোনা গেল ইএম বাইপাসের ধারে একটি শপিং মলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা আধিকারিকের গলাতেও। তিনি বললেন, ‘‘এ দিন প্রতি দশ মিনিট অন্তর আমাদের মলে স্রোতের মতো লোক ঢুকেছেন। এত দিন মাস্ক না পরলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না, তাই লোক কিছুটা কম হচ্ছিল। এখন প্রমাণ হচ্ছে, মাস্ক পরে ঘোরা কতটা কঠিন।’’ নাগেরবাজারের একটি শপিং মলের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সামনের উৎসবে মাস্ক বাদ, এটাই সব থেকে বড় স্বস্তি। আলাদা করে খাবারের স্টল খোলার পরিকল্পনা করা গিয়েছে এই বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে বলেই।’’

রাতের শহরে এমন খাবারের স্টল ফিরতে দেখা গিয়েছে শুক্রবার রাত থেকেই। এসএসকেএম হাসপাতালের কাছে হরিশ মুখার্জি রোডে এমন বহু স্টলে ভিড় ছিল রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। একই ভিড় দেখা গিয়েছে শরৎ বসু রোড এবং ইএম বাইপাসের একাধিক ধাবায়। পার্ক সার্কাস এবং পার্ক স্ট্রিটের বিভিন্ন পানশালা ও রেস্তরাঁর সামনেও ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। মধ্যরাতে এমনই একটি পানশালা থেকে বেরোনো গাড়িকে উদ্দাম গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখে পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বিধিভঙ্গের রোজনামচা শুরু হল বলে! এঁদের আটকাবে কে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement