জাতীয় সরোবরের তকমা না থাকলেও সুভাষ সরোবরে ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার অনুমতি চেয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় সরোবর রক্ষায় রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই আর্জি খারিজ করে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করতে না দেওয়া সংক্রান্ত জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কেই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। তবে এর জেরে নতুন করে বিপাকে পুর প্রশাসন।
কারণ, শহরের নানা জায়গায় ছটপুজোর জন্য অস্থায়ী ঘাটের ব্যবস্থা করা হলেও রবীন্দ্র সরোবর যে ওয়ার্ডের অন্তর্গত, সেখানে কোনও বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থাই করা হয়নি। যার জেরে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার অনুমতি মিলবে বলে এক প্রকার নিশ্চিত ছিল প্রশাসন? পরিবেশকর্মীদের বড় অংশের অবশ্য বক্তব্য, এই বিকল্প ব্যবস্থা না-রাখা আসলে প্রশাসনের সরোবর রক্ষা নিয়ে উদাসীনতারই আর একটি প্রমাণ!
একই অভিযোগ উঠেছে সুভাষ সরোবর ঘিরেও। জাতীয় সরোবরের তকমা না থাকলেও সুভাষ সরোবরে ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পূর্ব কলকাতার ওই সরোবরের জলদূষণ নিয়েও বারবার সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। তা সত্ত্বেও সুভাষ সরোবর কলকাতা পুরসভার যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত, সেখানেও ছটপুজোর জন্য কোনও জলাশয়ে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করে রাখা হয়নি। যদিও কলকাতা পুরসভার তরফে বুধবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গঙ্গা-সহ শহরের ৬৩টি জায়গায় ছট উদ্যাপনের জন্য মোট ১৪৩টি ঘাট তৈরি রাখা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে কেএমডিএ-ও এ বার ৫১টি ঘাটে ব্যবস্থা রাখার কথা জানিয়েছে। তবে দুই সরোবর সংলগ্ন এলাকায় কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
কলকাতা পুরসভার ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে রবীন্দ্র সরোবর। সেখানকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বললেন, “রবীন্দ্র সরোবরের আশপাশে এই ওয়ার্ডের মধ্যে বিকল্প জলাশয় তৈরির জায়গা কোথায়? সরোবরের সামান্য অংশ ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেও রয়েছে। সেখানেও বিকল্প ব্যবস্থা করার জায়গা নেই।” এর পরে তাঁর মন্তব্য, “আশপাশের ৯০, ৯১ এবং ৯২ নম্বর ওয়ার্ডে কিন্তু কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েই বলছি, জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় সত্ত্বেও অন্যান্য বছরে প্রচুর লোক রবীন্দ্র সরোবরে চলে আসেন। কিছুতেই আটকানো যায় না।” ওয়ার্ডের মধ্যে বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা থাকলে রবীন্দ্র সরোবরে একই রকম ভিড় হত কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তাঁর থেকে মেলেনি।
সুভাষ সরোবরের প্রায় পুরোটাই কলকাতা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর পবিত্র বিশ্বাসের আবার দাবি, “বিকল্প ব্যবস্থা করার জায়গা আছে হয়তো। কিন্তু কেএমডিএ না করলে আমরা কী করব?”
এ দিন সর্বোচ্চ আদালত রায় দেওয়ার আগেই উত্তর কলকাতায় কেএমডিএ-র বিকল্প ঘাট তৈরির উদ্যোগে খামতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। অনেকেই বলেছেন, “দক্ষিণে বিকল্প ঘাট তৈরিতে কেএমডিএ-র যে তৎপরতা দেখা গিয়েছে, তা উত্তরের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।”
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেছেন, “উত্তরে জলাশয়গুলিতে অস্থায়ী ঘাট তৈরির মতো উপযুক্ত জায়গা নেই।
তা ছাড়া উত্তরে বেশির ভাগ লোক গঙ্গাতেই ছটপুজো করেন।” এই যুক্তিতেই কি যে ওয়ার্ডে রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর রয়েছে, সেখানে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি?
কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলছেন, “সরোবরের কাছাকাছি নেই ঠিকই, তবে কিছুটা দূরে কয়েকটি জায়গায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”