Murder Case

চাকরির জটিলতা কাটাতেই ‘বলি’ ভ্রাতৃবধূকে, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

গত ২ এপ্রিল বন্দর এলাকায়, ওয়াটগঞ্জ থানার সত্য ডাক্তার রোডের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে এক মহিলার দেহাংশ পায় পুলিশ। পরের দিন পশ্চিম বন্দর থানায় গিয়ে ৩৪ বছরের এক মহিলার নিখোঁজ ডায়েরি করাতে চান তাঁর পরিবারের লোকজন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৫৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কেটে যাবে। পরিবারের অসুস্থ সদস্যেরাও একে একে সুস্থ হয়ে উঠবেন! কিন্তু এর জন্য হোম-যজ্ঞ করে নির্দিষ্ট দিনে ভ্রাতৃবধূর বলি দিতে হবে! এই অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই গার্ডেনরিচের গৃহবধূ দুর্গা সরখেলকে খুন করেছেন তাঁর ভাশুর শুদ্ধ নীলাঞ্জন সরখেল। খুন এবং দেহ টুকরো করে লোপাট করার এই মামলার তদন্তে নেমে শেষ পর্যন্ত এমনটাই মনে করছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের ২৭ নম্বর ধারা হাতিয়ার হতে চলেছে তদন্তকারীদের। কারণ, অভিযুক্তের কাছ থেকেই এই মামলার একাধিক তথ্য-প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, আদালতে খুব দ্রুত এই মামলার চার্জশিটও জমা দিতে চলেছেন তাঁরা।

Advertisement

গত ২ এপ্রিল বন্দর এলাকায়, ওয়াটগঞ্জ থানার সত্য ডাক্তার রোডের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে এক মহিলার দেহাংশ পায় পুলিশ। পরের দিন পশ্চিম বন্দর থানায় গিয়ে ৩৪ বছরের এক মহিলার নিখোঁজ ডায়েরি করাতে চান তাঁর পরিবারের লোকজন। পুলিশ কিছু ছবি দেখালে তাঁরা দেহাংশগুলি চিহ্নিত করেন। এর পরে পুলিশ তদন্তে নেমে ওয়াটগঞ্জেরই হেমচন্দ্র স্ট্রিটে দুর্গার শ্বশুরবাড়িতে যায়। দেখা যায়, সেখানে তাঁর ১৫ বছরের ছেলে রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির সদস্য বলতে শয্যাশায়ী শাশুড়ি এবং মানসিক সমস্যায় ভোগা ননদ। আর রয়েছেন দুর্গার ভাশুর। তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের।

জানা যায়, দুর্গার স্বামী ধরণীধর সরখেল ওরফে ধোনিকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন নীলাঞ্জন। কিন্তু ধোনি কোথায় আছেন, তা দীর্ঘদিন দুর্গাকে জানানো হয়নি। প্রশ্ন করলে নীলাঞ্জন বলতেন, ‘‘ভাই যেখানেই আছে, ভাল আছে।’’ ছেলেকে নিয়ে এর পরে
মা-বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন দুর্গা। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে গিয়ে দুর্গার ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে যান নীলাঞ্জনের মা। জানা যায়, এর দিনকয়েকের মধ্যে মায়ের শরীর ভাল নয়, দেখাশোনার লোক প্রয়োজন, এই বলে নীলাঞ্জন দুর্গাকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নেন। এর পরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই থাকতে শুরু করেন দুর্গা। কিন্তু এর মধ্যেই ধোনি যে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ছিলেন, সেখানে এক আবাসিকের মৃত্যু হয়। পুলিশ সেখানে হানা
দেওয়ার সুযোগ নিয়ে পালিয়ে আসেন ধোনি।

Advertisement

নীলাঞ্জন এবং তাঁর পরিবার-পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, আগে রেলে চাকরি করতেন তিনি। বহু দিন ধরেই পূজার্চনার প্রতি ঝোঁক তাঁর। এর মধ্যেই দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগে রেলের চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয় নীলাঞ্জনকে। তার পরেই পূজার্চনার প্রতি ঝোঁক আরও বাড়ে তাঁর। নীলাঞ্জন মাঝেমধ্যেই তারাপীঠে যেতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সেখানকার এক সাধুর সান্নিধ্যে এসেই তন্ত্রসাধনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। সেই সূত্রেই তিনি বলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক পুলিশকর্মী জানান, নীলাঞ্জন জেরায় দাবি করেছেন, যে বয়সের, যে ধরনের মহিলার বলি দিলে তাঁর সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে বলে তিনি জেনেছিলেন, দুর্গার সঙ্গে তা মিলে যায়। নির্দিষ্ট দিনে দুর্গাকেই তাই বলি দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর স্বামী হঠাৎ এসে পড়ায় খানিকটা তড়িঘড়িতেই খুন করতে হয় নীলাঞ্জনকে। জেরায় তিনি সমস্তটাই জানিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। এর পরে সেই দেহ টুকরো করে নিয়ে গিয়ে বন্দর এলাকার জঙ্গলের মধ্যে যজ্ঞও সারেন তিনি।

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘এমন প্রবণতা প্রায়ই সামনে আসছে। সমাজমাধ্যমে এমন বহু জিনিস প্রতিনিয়ত প্রচারিত হয়ে চলেছে, যার কোনও বাস্তবতা নেই। কেউ কেউ এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই অবাস্তব কিছু পাওয়ার আশায় এমন অপরাধ ঘটিয়ে ফেলছেন। আদতে যা দেখছেন, যা শুনছেন— সবটাই বিশ্বাসযোগ্য কি না, সেটা আগে ভাবুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement