দ্বিমুখী: (বাঁ দিকে) নৈশ কার্ফুর জেরে অনেকটাই ফাঁকা দক্ষিণ কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। (ডান দিকে) রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলছে খোশগল্প। সোমবার সন্ধ্যায়, উত্তর কলকাতার রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দেশ জুড়ে চলবে নৈশকালীন কার্ফু। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের জনতাকে ঘরবন্দি রাখতে কার্ফু আরোপ করতে চান না। বরং তিনি চান, লকডাউনই চলুক সারা দিন। সোমবার, চতুর্থ দফার লকডাউনের প্রথম দিনে, কার্ফু বনাম লকডাউনের এই দোলাচলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই শোনা গেল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে।
কারও বক্তব্য, রাতেই কেন কার্ফু জারি করা হল, তা স্পষ্ট নয়। কেউ আবার বললেন, ‘‘কার্ফু জারি হলে মানুষ ভয় পাবে বেশি। রাস্তায় বেরোবে কম।’’ এ দিন সন্ধ্যা ৭টার পরে দেখা গেল, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতার রাস্তাঘাট বেশি ফাঁকা। তবে তা কেন্দ্রের নৈশ কার্ফুর নির্দেশিকার কারণে নয় বলেই দাবি রাসবিহারী মোড় চত্বরে ওষুধ কিনতে বেরোনো এক যুবকের। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই করোনার আতঙ্কে ভুগছেন। কেউই আর তাই খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোচ্ছেন না।’’
কেন্দ্র নৈশ কার্ফুর কথা বললেও রাজ্যের মানুষকে দমবন্ধ করে উদ্বেগে রাখাটা ঠিক নয় বলে জানিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘লকডাউন চলবে সারা দিন। অনুরোধ থাকবে, ৭টার পরে কেউ বাইরে থাকবেন না। তবে কেউ জমায়েত করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’
আরও পড়ুন: আটকে পড়া যাত্রীদের নিয়ে শহরে ফিরল বিমান
মুখ্যমন্ত্রীর এই কথাকেই সমর্থন করছেন দেশবন্ধু পার্কের সামনে গাছতলায় বসে থাকা কয়েক জন প্রবীণ। ঘড়িতে তখন প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। এখনও বাইরে কেন? প্রশ্ন শুনে ওই প্রবীণদের দাবি, তাঁরা পাড়াতেই হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে কয়েক মিনিটের জন্য গাছতলায় বসেছেন। তাঁদেরই এক জন ইন্দ্রজিৎ রায়ের প্রশ্ন, ‘‘বলতে পারেন, কার্ফু শুধু রাতে কেন? করোনা কি শুধু রাতেই জেগে ওঠে?’’
তাঁর দাবি, সকালে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষই রাস্তায় বেরোন। রাতে সেই সংখ্যাটা পাঁচ শতাংশের মতো। সেই কথার সূত্র ধরেই তাপস দাস নামে আর এক প্রবীণ বললেন, ‘‘কার্ফু শুধু রাতে কেন করা হল, সেটা তো স্পষ্ট নয়। করতে হলে সারা দিনই করুক।’’
রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে সার দিয়ে দাঁড়ানো বাসের সামনে জটলা করা বিজয় গুপ্ত অবশ্য কার্ফুর খবরটা জানেন না বলেই দাবি করলেন। তবে করোনা থেকে বাঁচতে রাস্তায় ঘোরা বারণ বলেই তিনি জানেন। তা হলে বাইরে কেন? ‘‘পুরসভার শৌচালয়ই আমাদের ভরসা। তাই এসেছিলাম।’’ কথাটা বলেই গলির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন বিজয়।
দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা, বৃদ্ধা বিভা সাহা জানালেন, কার্ফুর সময় শুরু হয়ে গেলেও তিনি রাস্তায় রয়েছেন একপ্রকার বাধ্য হয়েই। তাঁর দাবি, ‘‘মুচিবাজারে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে হেঁটে ফিরছি তো। তাই দেরি হয়ে গেল।’’
উত্তরের বাগবাজার, শ্যামবাজার, গিরিশ পার্ক, রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় তিন-চার জনকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। দক্ষিণে অবশ্য তেমনটা নয়। ভবানীপুরের গলির ভিতরে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন গণেশ ধাড়া। বললেন, ‘‘আমি ওষুধ নিতে বেরিয়েছি। কার্ফু, লকডাউন যেটা হবে, সেটাই ভাল। করোনা রুখতে বাড়িতে থাকাই ভাল।’’
দক্ষিণে এ দিন সুনসানই ছিল কালীঘাট রোড, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাটের মতো এলাকা। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও ছিল দিনের থেকে কম। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সি এক ব্যক্তি। কার্ফু তো শুরু, বেরিয়েছেন কেন? উত্তর এল, ‘‘এখন উত্তর দেওয়ার সময় নেই!’’