মেট্রো সূত্রের খবর, হাওড়া ময়দান থেকে মহাকরণের মধ্যে প্রতি ২০০ মিটার অন্তর একটি করে ছ’-সাত মিটার লম্বা সুড়ঙ্গপথ তৈরি করা হচ্ছে। —ফাইল চিত্র।
হাওড়়া ময়দান থেকে মহাকরণের মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গকে জুড়তে চলেছে আটটি নতুন ছোট সুড়ঙ্গ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোনও একটি সুড়ঙ্গে মেট্রো আটকে পড়লে যাতে দ্রুত পাশের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে যাত্রীরা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারেন, তার জন্যই ওই ব্যবস্থা।
মেট্রো সূত্রের খবর, পাশাপাশি দু’টি সুড়ঙ্গের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা বা ‘ক্রস প্যাসেজ’ তৈরি করতে হাওড়া ময়দান থেকে মহাকরণের মধ্যে প্রতি ২০০ মিটার অন্তর একটি করে ছ’-সাত মিটার লম্বা সুড়ঙ্গপথ তৈরি করা হচ্ছে। দেড় মিটার ব্যাসার্ধের ওই পথগুলি ‘আর্চ’ আকৃতির। যাত্রীরা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ওই পথ ব্যবহার করে এক দিকের সুড়ঙ্গ থেকে অন্য দিকের সুড়ঙ্গে পৌঁছতে পারবেন।
কেন তৈরি হচ্ছে এই বিকল্প ব্যবস্থা?
মেট্রোকর্তাদের দাবি, সবটাই আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে। ন্যূনতম সময়ে যাত্রীদের অক্ষত অবস্থায় বার করে আনাই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। তাঁরা বলছেন, কোনও কারণে সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেন বিকল হয়ে পড়লে বা অন্য কোনও সমস্যা দেখা দিলে যাত্রীদের নিরাপদে বার করে আনার জন্য ট্রেনের ফু়টবোর্ডের উচ্চতায় সুড়ঙ্গের গা ঘেঁষে দেড় ফুট চওড়া একটি পথ তৈরির পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। ওই দু’টি পথ পূর্ব ও পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে পাশাপাশি থাকছে। সুড়ঙ্গে ট্রেন বিকল হলে যাত্রীরা ওই পথ ব্যবহার করে সামনের বা পিছনের দিকে এগিয়ে নিকটতম স্টেশন বা বেরোনোর পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
কিন্তু তার পরেও পাশাপাশি দু’টি সুড়ঙ্গকে জুড়ে ‘ক্রস প্যাসেজ’ তৈরির উদ্দেশ্য হল, বড়সড় বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা। এমনটাই দাবি করছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কর্তারা। তাঁদের দাবি, বড় কোনও বিপর্যয়ের জেরে একটি সুড়ঙ্গ অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেও যাত্রীরা যাতে সঙ্গে সঙ্গে পাশের সুড়ঙ্গকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই ওই ব্যবস্থা।
হাওড়া ময়দান থেকে গঙ্গার পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মেট্রোপথের মধ্যে তিনটি এবং নদী পেরিয়ে ব্রেব্রোর্ন রোড সংলগ্ন এলাকা থেকে মহাকরণ পর্যন্ত মেট্রোপথের মধ্যে পাঁচটি সুড়ঙ্গ তৈরি হবে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নদীর নীচে থাকা ৫২০ মিটার সুড়ঙ্গপথে এই ধরনের কোনও সংযোগকারী পথ তৈরি হচ্ছে না। মেট্রোকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর নীচে নুতন করে সুড়ঙ্গ তৈরিতে ঝুঁকি রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই ওই অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে নদীর দু’পাশেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বেরিয়ে আসার জন্য পথ থাকছে। মাঝের অংশে কোথাও সমস্যা দেখা দিলে যাত্রীরা দু’দিকেই প্রায় ২৫০ মিটারের মধ্যে বেরিয়ে আসার বিকল্প পথ পাবেন।
কী ভাবে তৈরি হচ্ছে ওই বিশেষ সুড়ঙ্গপথ?
মেট্রোর এক কর্তা জানান, ‘নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং মেথড’ (এনএটিএম) ব্যবহার করে ওই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। ছোট আকারের ‘এক্সক্যাভেটর’ ব্যবহার হচ্ছে তাতে। কিছুটা পথ এগোনোর পরে ইস্পাতের বিশেষ কাঠামো ব্যবহার করে উপরের মাটির চাপ ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে। মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা ইতিমধ্যেই আটটি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ করেছে। আপাতত ওই সুড়ঙ্গপথগুলিকে ব্যবহারের উপযোগী করতে শেষ পর্বের কাজ চলছে।
এ প্রসঙ্গে এক মেট্রোকর্তা বলেন, “নতুন সুড়ঙ্গগুলির কাজ শেষ হলে আপ়ৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বেরিয়ে আসাটা অনেক সহজ হবে।”