নতুন চেহারায় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
পুরনো দিনের লাল রঙের বাড়ি, ফাঁকা ফাঁকা একটা পরিবেশ। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের এই চেনা ছবি এ বাদ বদলে গেল। তৈরি হল ঝাঁ-চকচকে এক হাসপাতাল। অর্থোপেডিক, পালমোনারি মেডিসিন এবং ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর)-এর আরও উন্নত চিকিৎসা মিলবে ওই হাসপাতাল থেকেই।
সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালের দ্বিতীয় অ্যানেক্স ভবন হিসেবে ওই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচতলা ভবনে মোট শয্যা সংখ্যা ৩৮৭। যার মধ্যে অস্থি বিভাগের জন্য ২২৪টি শয্যা (পুরুষ ১১৫টি, মহিলা ১০৯টি), পালমোনারি মেডিসিনে ৪২টি, পিএমআর-এ ৭৪টি, আইটিইউ-এ ১৯টি, এইচডিইউ-এ ২৫টি ও কেবিনে তিনটি শয্যা থাকছে। এ ছাড়াও থাকছে দু’টি মেজর অপারেশন থিয়েটার, একটি মাইনর অপারেশন থিয়েটার এবং একটি জরুরি অপারেশন থিয়েটার।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালকে এসএসকেএমের দ্বিতীয় অ্যানেক্স ভবন হিসেবে তৈরি করে সেখানে ওই বিভাগগুলির পরিষেবা বৃদ্ধির নির্দেশিকা জারি হয়েছিল ২০১৭ সালে। সম্প্রতি আগের তেতলা বাড়িটি সংস্কার করে উপরে আরও দু’টি তল বাড়ানো হয়েছে। ওয়ার্ড বয়ের কাজ থেকে শুরু করে হাসপাতাল চত্বর সাফাই ও নিরাপত্তা-সহ যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। খরচ হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন অ্যানেক্স ভবনটি তৈরি হওয়ায় রাজ্যের সব চেয়ে বেশি শয্যার অর্থোপেডিক পরিষেবা মিলবে এখান থেকেই। এই মুহূর্তে পিজিতে ওই বিভাগে শয্যা রয়েছে প্রায় ৯০টি। অনেক সময়েই সেখানে ভর্তি হতে না পেরে ভোগান্তির অভিযোগ তোলেন রোগীরা। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, মূলত অস্থি বিভাগে যাঁরা জরুরি চিকিৎসার জন্য আসবেন, তাঁরা এসএসকেএমে পরিষেবা পাবেন। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক চিকিৎসা, অর্থাৎ অস্ত্রোপচার বা অন্য কিছুর জন্য রোগীকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পাঠানো হবে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এতে পিজির অর্থোপেডিক বিভাগে যেমন ভিড় কমবে, তেমনই আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’’
পাশাপাশি, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্দেশিকা মোতাবেক এই হাসপাতালে চালু হচ্ছে পালমোনারি মেডিসিন বিভাগ। যেখানে ডিএম (পালমোনারি মেডিসিন) পড়ার সুযোগ মিলবে। থাকছে দু’টি আসন। এ ছাড়াও পিএমআর বিভাগের মধ্যে ‘নিউরো রিহ্যাব’, ‘পেডিয়াট্রিক রিহ্যাব’ ও ‘অ্যাম্পুটেশন অ্যান্ড পোডিয়াট্রি— ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিহ্যাব’-এর ব্যবস্থা থাকছে। স্ট্রোক বা শিড়দাঁড়ার সমস্যার সম্পূর্ণ থেরাপি মিলবে ‘নিউরো রিহ্যাব’-এ। সেরিব্রাল পলসি-সহ স্নায়ুর নানা সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে অন্য চিকিৎসা পাবে ‘পেডিয়াট্রিক রিহ্যাব’-এ।
আবার, ‘অ্যাম্পুটেশন অ্যান্ড পোডিয়াট্রি— ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিহ্যাবে’ কৃত্রিম হাত-পা লাগানোর পরে কী ভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যাবে, সেই সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে পায়ের পাতা থেকে হাঁটু, কোমর ও শিরদাঁড়ায় তৈরি হওয়া সমস্যার চিকিৎসাও মিলবে। এখন পিজিতে পিএমআর বিভাগে শয্যা রয়েছে প্রায় ২৫টি। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘একসঙ্গে সব বিভাগ চালু হবে না। আশা করা যাচ্ছে আজ, শুক্রবার থেকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে অর্থোপেডিকের রোগী পাঠানো যাবে।’’