ফাইল চিত্র।
রাস্তার আলো জ্বলছে না। ব্লকের ভিতরে আগাছা বেড়ে জঙ্গলের চেহারা নিয়েছে। জল সরবরাহের পাইপলাইনেও সমস্যা। এ সবের সমাধানে উদ্যোগী হতে বাসিন্দাদেরই ছুটতে হয় সরকারি দফতরে। হেল্পলাইন আছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, হেল্পলাইনের ফোন বেজে যায় বহু সময়েই। তাই হিডকো বা নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) দফতরে না ছুটে উপায় থাকে না তাঁদের।
তৈরির পর থেকে প্রায় দেড় দশকেরও বেশি কেটে গিয়েছে। নিউ টাউনে বড় বড় আবাসন তৈরি হয়েছে। বসতিও বাড়ছে। এই উপনগরীকে ঘিরে আলাদা বিধানসভা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনও ‘পুর ব্যবস্থায়’ এখানকার নাগরিক পরিষেবার কাজ এখনও পরিচালিত হয় না। নাগরিক সমস্যার সমাধান করে হিডকো কিংবা এনকেডিএ।কিন্তু নাগরিক সমস্যার দিকে দৈনন্দিন নজরদারি চালাতে কোনও পুর প্রতিনিধি এখানে নেই। নিজেদের সমস্যা হিডকো বা এনকেডিএ-কে জানাতে বাসিন্দারা তাই সংগঠন তৈরি করছেন। তাঁদের দাবি, পেশাগত কাজ সামলানোর পরেই তাঁরা নাগরিক সমস্যার দিকে নজর দিতে পারেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সাপুরজি এলাকায় জমা জলে নিকাশি নালার ঢাকনায় পা আটকে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় বসে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন স্থানীয় একটি আবাসনের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। আবাসিকদের সংগঠন ‘নিউ টাউন সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার ফ্রেটার্নিটি’ জানাচ্ছে, পুর প্রতিনিধি বা তাঁর লোকজন এই ধরনের সমস্যার উপরে নজর রাখতে পারেন।
সংগঠনের সম্পাদক সমীর গুপ্তের কথায়, ‘‘আমরা মোটের উপরে সমস্যাগুলি নিয়ে হিডকো কিংবা এনকেডিএ-র সঙ্গে আলোচনা করি। কিন্তু ছোট সমস্যাও যে বড় হয়ে যেতে পারে, সেটা মঙ্গলবারের ঘটনাতেই প্রমাণ হয়েছে। এ সব সমস্যার উপরে পুর প্রতিনিধিরাই নজর রাখতে পারেন। আমাদের সংগঠনের প্রবীণেরা বয়সের কারণে সব সময়ে ছোটাছুটি করতে পারেন না। আর নতুন প্রজন্মকে নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।’’
জন্মলগ্নে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সল্টলেকেও নোটিফায়েড অথরিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তখন অথরিটির কাছে পৌঁছতে হত নাগরিকদেরই। জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় মাত্র ছ’বছরের মধ্যেই ১৯৯৫ সালে বিধাননগর পুরসভা তৈরি হয়, এমনটাই জানাচ্ছেন সল্টলেকের বাসিন্দারা।
নিউ টাউনের বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে সেখানে কম-বেশি ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। বড় বড় আবাসনগুলিতেও ফ্ল্যাট ভাড়ায় দেওয়া রয়েছে। অজস্র ফাঁকা ফ্ল্যাটে কেয়ারটেকারেরা সপরিবার বসবাস করছেন। তাঁরাও এখন নিউ টাউনেরই বাসিন্দা হয়ে গিয়েছেন বলেই দাবি আবাসিক সংগঠনের।
এই মুহূর্তে নিউ টাউনকে পুরসভা বা কর্পোরেশন করার কোনও ভাবনাচিন্তা সরকারের রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে মন্তব্য করতে চাননি বর্তমান পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
যদিও এক সময়ে এ নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল। যখন পুরসভা থেকে কর্পোরেশনে উন্নীত হয় বিধাননগর, তখন পরিকল্পনা হয়েছিল দমদমের কিছু অংশ এবং নিউ টাউনকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা হিডকোর বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানান, পুরসভা বা কর্পোরেশন গঠন করতে হলে বাসিন্দাদের
নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকা প্রয়োজন।
ফিরহাদ বলেন, ‘‘জনসংখ্যার হিসাবে নিউ টাউনে এখন সি-স্তরের পুরসভা হতে পারে। নিউ টাউন পরিচালনায় যে খরচ হয়, ওই স্তরের পুরসভা কিন্তু তা পাওয়ার অধিকারী হবে না। এই উপনগরীতে অজস্র ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে আছে। সেগুলি ভরে গেলেও জনসংখ্যা একটা জায়গায় পৌঁছতে পারে। আমি পুরমন্ত্রী থাকা পর্যন্ত নিউ টাউনকে পুরসভা বা কর্পোরেশন করার দিকগুলো নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছিল।’’