পরীক্ষা: টালা সেতুর অবস্থা খতিয়ে দেখছেন রেল ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
টালা সেতু ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। তাই ওই সেতু দিয়ে চলাচলকারী পণ্যবাহী গাড়ি, ছোট গাড়ি এবং বাস-মিনিবাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ ব্যবহার করতে চাইছে প্রশাসন। সূত্রের দাবি, টালা সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণের ফলে শহরে পণ্যবাহী ভারী গাড়ি চলাচলের উপরে প্রভাব পড়েছে। তাই চিৎপুর রেল ইয়ার্ডের কাছে একটি লেভেল ক্রসিং তৈরি করে সেই রাস্তাটি মূলত পণ্যবাহী ভারী গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হবে। বাস-সহ বাকি গাড়িগুলিকে অন্য দু’টি রাস্তা দিয়ে ঘোরানো হবে। সেই রাস্তার একাংশ পুজোর আগে থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
আগামী দিনে টালা সেতু ভাঙা এবং যান চলাচল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেকটাই নির্ভর করছে ওই লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভবিষ্যতে যানজট হলে প্রয়োজনে ওই লেভেল ক্রসিংয়ের রাস্তা ছোট গাড়ি চালানোর জন্যও ব্যবহার করা হতে পারে।
শনিবার সকালে বিকল্প রাস্তার সন্ধানে পরিবহণসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (শিয়ালদহ) প্রভাস দাসমানা এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডের নেতৃত্বে পূর্ত, পুলিশ, পরিবহণ ও রেলের কর্তারা পরিদর্শন করেন। রেল সূত্রের খবর, লেভেল ক্রসিং তৈরির জন্য রেল বোর্ডের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। রেল লেভেল ক্রসিং তৈরি করলেও তার খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রাজ্যকে বহন করতে হবে।
সম্ভাব্য বিকল্প
পণ্যবাহী গাড়ি
• বিটি রোড- কাশীপুর-ব্রজদয়াল সাহা রোড-শেঠপুকুর রোড-প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোড-বাগবাজার
ছোট গাড়ি (বাগবাজারমুখী)
• বিটি রোড-খগেন চ্যাটার্জি রোড- কাশীপুর রোড- কাশীপুর ব্রিজ-বাগবাজার
(চিড়িয়ামোড়মুখী)
• বাগবাজার-লকগেট উড়ালপুল-বিটি রোড
বাস, মিনিবাস
• বিটি রোড-টালা- বেলগাছিয়া রোড-আর জি কর রোড
* চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও বাকি
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত লেভেল ক্রসিংয়ের জায়গায় নুনের গুদামের জন্য একটি লাইন এবং চক্ররেলের আপ ও ডাউন লাইন রয়েছে। যেহেতু রাত সাড়ে আটটার পরে চক্ররেল চলে না তাই লেভেল ক্রসিংয়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। দিনের বেলাও কম ট্রেন চলাচল করে। তাই দিনের বেলা লেভেল ক্রসিংয় ব্যবহার করলেও সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুন: যাদবপুরে উত্তরপত্র ফাঁস কাণ্ডে এ বার এফআইআর দায়ের, কাঠগড়ায় পরীক্ষক
পুলিশ জানিয়েছে, বিটি রোডের দিক থেকে কাশীপুরের জগন্নাথ টেম্পল রোড এবং অন্যান্য রাস্তা গিয়ে ব্রজদয়াল সাহা রোডে পড়বে পণ্যবাহী গাড়ি। সেখান থেকে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে শেঠপুকুর রোড, প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোড হয়ে বিটি রোড বা বাগবাজারের দিকে যেতে পারবে। গত দেড় মাস ধরে কলকাতার প্রায় সব পণ্যবাহী ভারী গাড়িই বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে কলকাতায় ঢুকছে। নতুন রাস্তা চালু হলে বিদ্যাসাগর সেতুর চাপ কমবে।
পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চিৎপুর লকগেট উড়ালপুল ও কাশীপুর ব্রিজ দিয়ে বাগবাজার থেকে বি টি রোডের মধ্যে ছোট গাড়ি চলবে। পুলিশের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে যে সব রাস্তা দিয়ে ঘুরপথে বাস চলছে তাই চলুক। তবে সে ক্ষেত্রে রাজা মণীন্দ্র রোড দিয়ে শুধুমাত্র আর জি কর রোডের দিকে বাস যাবে।
টালা সেতু কবে থেকে ভাঙা শুরু হবে তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসনের খবর, বিকল্প রাস্তা পুরোপুরি তৈরি না-হলে সেতু ভাঙা হবে না। রেল লাইনের উপরে থাকা সেতুর অংশটি রেলই ভাঙবে। বাকিটি ভাঙবে রাজ্য সরকার। এ দিন ওই সেতুর নীচের অংশ ঘুরে দেখেন পূর্ত দফতর ও রেলের আধিকারিকেরা।