আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে কুমোরটুলিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কলকাতার দুর্গাপুজোর শিল্প বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃতি পাওয়ার পরে এ যেন অন্য উড়ান। শহরের পুজো-ভাবনারই ফলিত প্রয়োগ এ বার হাতেকলমে দেখা যাবে আমেরিকার নিউ জার্সিতে। তাতে একই সূত্রে বাঁধা পড়ছে ভারত ও আমেরিকা। এটা নেহাতই কথার কথা নয়, জোর গলায় বলছেন কলকাতার পুজোর তারকা থিম-স্রষ্টা ভবতোষ সুতারও। তাঁর কথায়, “বিদেশে কুমোরটুলির প্রতিমা তো কবে থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু পুজো ঘিরে পূর্ণাঙ্গ শিল্প-ভাবনাটিই আমরা আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছি।”
কুমোরটুলির দুর্গাপ্রতিমার জাহাজে বিলেত-আমেরিকা পাড়ির মতো এখানে পুরস্কার জেতা পুজো মণ্ডপের নকল দেখা গিয়েছে দেশের নানা শহরে। শহরের থিম শিল্পীরাও মুম্বই, দিল্লিতে বড় বাজেটে কাজ করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় পুজো মানে কোনও বড় হলঘরে সপ্তাহান্তের উদ্যাপন। কলকাতার মতো মাসের পর মাস মাঠ জুড়ে কাজের বিলাসিতা নেই। নিউ জার্সির এডিসন শহরের ইস্ট ব্রান্সউইকের পুজোকর্তাদের তাই জ়ুম বৈঠকে থিম পরিবেশনের কৃৎকৌশল শেখাচ্ছেন ভবতোষ। কলকাতার মতো শিল্পী, কারিগরদের বিশাল দলবলও আমেরিকায় নেই। নিউ জার্সিবাসী ব্যারাকপুরের জয়দীপ চক্রবর্তী কিংবা বেলাকোবার কৃষ্ণ সেনেরা পেশাগত ব্যস্ততার ফাঁকে নিজেদের বাড়িতে এখন থেকেই থিম নির্দেশকের কথা মতো মণ্ডপের কাজ করছেন।
পুজোর এখনও চার মাস বাকি। তবু এখনই রোজ বৈঠক সেরে মণ্ডপের ছাঁচ থেকে সাজসজ্জার নানা উপকরণ তৈরি হচ্ছে। পুজোর সপ্তাহান্তের ঠিক আগে হলঘর হাতে পেলে যা জুড়ে জুড়ে মণ্ডপ সাজানো যাবে। উদ্যোক্তাদের তরফে বসুন্ধরা চক্রবর্তী আগামী মাসে কলকাতায় এলে থিমের আরও কিছু উপকরণ ভবতোষ তাঁর হাত দিয়ে পাঠাবেন। ভবতোষের তৈরি দুর্গাপ্রতিমাও জুন নাগাদ জাহাজে আমেরিকা পাড়ি দেবে। দাঁড়িয়ে নয়, ঠাকুর বসে রয়েছেন। যেন অতিমারি শেষে স্থিতিশীলতার ভাব। দুর্গাপুজোর প্রকৃতিচেতনার সঙ্গে বিশ্বের উষ্ণায়নের সঙ্কট মিলিয়ে থিম-ভাবনার নাম ‘বসুন্ধরা’।
কলকাতাতেও কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজোর উপস্থাপনায় শিল্পীর একক সৃজনশীলতা ছাপিয়ে অনেক জনের যৌথতা মেলে ধরা ভবতোষের লক্ষ্য। বলছেন, “নিউ জার্সির উদ্যোক্তাদের নিয়েও সেই চেষ্টাই করছি।” দুর্গাপুজোর শিল্প ঘরানা বিষয়ক গবেষক, লেখক তপতী গুহঠাকুরতার মতেও, “কলকাতার পুজোর ইউনেস্কো স্বীকৃতির পরে প্রবাসীদের থিমপুজোয় ঝোঁকাটাও স্বাভাবিক। আর অতিমারি শিখিয়েছে, ঘরে বসেই এখন সারা বিশ্বের সঙ্গে মিশে যাওয়া সম্ভব। কলকাতার থিমশিল্পীদের তাই অন্য ভাবে কাজের দরজা খুলে গিয়েছে। হয়তো আরও অনেক শিল্পী এ ভাবেই বিদেশের দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত হবেন।”