প্রতীকী ছবি
গাড়িতে চেপে কলকাতার কাছে পৌঁছে গিয়েছে এগারো জন। রাত পেরিয়ে ভোর হলেই আলিপুরের বডিগার্ড লাইন্সে হাজির হবে তারা। শুরু হয়ে যাবে পুলিশি জীবন!
ওরা অবশ্য কেউ মানুষ নয়, ঘোড়া। লালবাজারের খবর, প্রায় এক দশক পরে ঘো়ড়া কেনা হয়েছে বাহিনীর জন্য। একসঙ্গে ১১টি। আজ, শুক্রবার ভোরে কলকাতা পৌঁছচ্ছে তারা। এই ঘোড়াগুলি কলকাতা পুলিশের ঘো়ড়সওয়ার বাহিনীতে যোগ দেবে। তবে পুরোদস্তুর কাজে নামার আগে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণও। বর্তমানে ঘোড়সওয়ার বাহিনীতে ৬৭টি ঘোড়া রয়েছে। নতুন এগারো জন এলে সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৮-এ।
ইতিহাস বলছে, ১৮৪০ সালে দু’জন সওয়ার এবং এক জন দফাদার (মুখ্য আধিকারিক)-কে নিয়ে তৈরি হয় ঘোড়সওয়ার বাহিনী। সে সময়ে তাঁদের কাজ ছিল সরকারি বার্তা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছনো এবং কোনও জাহাজ দেখতে পেলে হারবার মাস্টারকে জানানো। ১৮৪২ সালে ময়দান এলাকায় টহলদারির দায়িত্ব পায় ঘোড়সওয়ার বাহিনী। ১৮৫৬ সালে কলকাতা পুলিশ তৈরি হওয়ার পরে ঘোড়সওয়ার বাহিনীকে জুড়ে নেওয়া হয়। ১৭৮ বছরের পুরনো এই বাহিনীর বর্তমানে মূল দায়িত্ব কুচকাওয়াজ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ময়দানে টহলদারি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এক সময়ে বিলেত থেকে ঘোড়া আনা হত। স্বাধীনতার পরে মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা ও পুণের খামার থেকে ঘোড়া কেনা হয়। এ বারও ঘোড়ারা এসেছে পঞ্জাবের একটি খামার থেকে। সবক’টির বয়স পাঁচ বছরের আশপাশে। এর দাম কত, তা অবশ্য খোলাখুলি বলতে নারাজ পুলিশকর্তারা। লালবাজারের এক অফিসার বলছেন, ‘‘সরকার থেকে ঘোড়াপিছু ২ লক্ষ টাকা দাম দেওয়া হয়। এক লক্ষ টাকা দামেরও ঘো়ড়া আছে, ১০ লক্ষ টাকা দামেরও ঘোড়া আছে। দরাদরি করে কিনতে হয়।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এই দফায় ১০টি ঘোড়ার দাম দিয়ে ১১টি ঘো়ড়া কেনা হয়েছে। লালবাজারের তরফে যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন) পারুলকুশ জৈন নিজে গিয়ে ঘোড়া দেখে কিনেছেন। পরে ঘোড়া আনতে এক সার্জেন্টের নেতৃত্বে এক জন সওয়ার এবং দু’জন সহিস গিয়েছেন। ঘোড়াদের ট্রাকেই আসছেন তাঁরা। বৃষ্টি না হলে বৃহস্পতিবারই পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁদের।
এক পুলিশ আধিকারিক জানান, পাঁচ বছর না হলে ঘো়ড়ারা প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি হয় না। ১১টি ঘোড়ার মধ্যে কয়েকটি পাঁচ বছরের কমবয়সি। পাঁচ বছর পেরোলেই শুরু হবে তাদের প্রশিক্ষণ। ঘোড়াদের রোজনামচা কেমন?
পুলিশ সূত্রের খবর, ভোরে সামান্য নাস্তার পরেই দিন শুরু হয়ে যায় চাকরিরত ঘোড়াদের। কাউকে পিঠে সওয়ারি চাপিয়ে বেরোতে হয় টহলদারিতে, কেউ আবার সহিসের সঙ্গে চলে যায় ‘প্যাডক’-এ কসরত করতে। ডিউটি, কসরত শেষে ফিরে আসা এস এন ব্যানার্জি রোডে বাহিনীর সদর দফতরের আস্তাবলে। তবে প্রশিক্ষণরতদের এস এন ব্যানার্জি রোডে রাখা
হয় না। তাদের ঠিকানা আলিপুরে সশস্ত্র পুলিশের সদর কার্যালয় বডিগার্ড লাইন্স। পুলিশকর্তারা বলছেন, অমন তাগড়াই দেখতে হলে হবে কী, এই সব ঘোড়াদের অনেক যত্ন করতে হয়। সামান্য শরীর খারাপও বিপজ্জনক হতে পারে। সেই কারণে সহিস ও চিকিৎসকদের বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। নতুন ‘একাদশ’-কে স্বাগত জানাতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে বাহিনীর পদস্থ কর্তাদের।