কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের জেরে কাজ থমকে ছিল প্রায় তিন বছর। ফলে সল্টলেক থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চিন্তা ছিল বাড়তি খরচ কোথা থেকে মিলবে, তা নিয়েও। কিন্তু প্রকল্পের ঋণদাতা সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা) বাড়তি খরচের বোঝা আনুপাতিক হারে বহনে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত প্রথম ধাপের মেট্রো প্রকল্প চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
শনিবার দত্তাবাদ এবং হাওড়া ময়দান এলাকায় মেট্রো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নজরদারির দায়িত্ব দিয়েছেন। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর অফিসে গিয়েও তিনি এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা সারেন। এ দিন তাঁর সঙ্গে মেট্রোর কাজ দেখতে এসেছিলেন মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব মুকুন্দ সিংহ। ছিলেন কলকাতা মেট্রোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম কে গর্গও।
তিন বছর মেট্রোর কাজ বন্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত যে রাজ্য সরকারের সহায়তা মিলেছে, তা জানাতে ভোলেননি বাবুল। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছিল না বলেই এত দিন কাজ আটকে ছিল। তবে ‘ঝালমুড়ি’ পর্বের পরে আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বহু বার আলোচনা হয়। ফিরহাদ (ববি) হাকিমের সঙ্গেও কথা হয়। এর পরে ওঁরা জট কাটিয়ে কেএমআরসি-র হাতে দত্তাবাদের জমি তুলে দিতে পেরেছেন। তার ফলেই ফের কাজ শুরু করা গিয়েছে। আমরা বারবারই বলেছি, উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র আর রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাজ্যের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।’’
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী এসে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে যান। এ দিন বাবুলকে সেই প্রসঙ্গের কথা স্মরণ করাতেই তিনি সাফাই দিয়ে বলেন, ‘‘উন্নয়নে সহযোগিতা পেলে ধন্যবাদ দিতেই হবে। আবার যে সব জায়গায় কাজ আটকে রয়েছে, সেখানে সহযোগিতা মিলছে না বলেই সমস্যা হচ্ছে।’’ কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে যে কোনও রাজনীতি করা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাবুল।
হাওড়ায় বাবুল বলেন, ‘‘হাওড়া ময়দানের মতো জায়গায় এত দিন কাজ আটকে থাকার ফলে স্থানীয় মানুষকে যে ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে, তার ক্ষমা নেই। তবে এ বার কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে।’’
তাঁর কথায়, ‘‘২০১৭ সালের ডিসেম্বরেই সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ মেট্রো চলবে। আর হাওড়া পর্যন্ত মেট্রো চালু হবে ২০১৯-এর অগস্টে।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের খরচ হওয়ার কথা ছিল ৪৮৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু দেরি হওয়ার কারণে এখন খরচ হবে ৮১০০ কোটি। রাজ্যের কথামতো ‘রুট’ বদল করতে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৭৬৪ কোটি টাকা।
কিন্তু এই বাড়তি টাকা আসবে কোথা থেকে? ঋণদাতা সংস্থা জাইকা কি টাকা দিতে রাজি?
কলকাতা মেট্রোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম কে গর্গ বলেন, ‘‘জাইকা এই প্রকল্পে ৪৬.২২ শতাংশ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। বাড়তি খরচের ক্ষেত্রেও ওই হারে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে। সেই কারণে জাইকার সঙ্গে নতুন করে চুক্তিও হবে।’’
মেট্রোর কাজ যে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবে কেন্দ্রের টাকা বরাদ্দের প্রসঙ্গও তোলেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘‘আগে মেট্রোর এই প্রকল্পের জন্য বছরে এক-দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ হত। এ বারই প্রথম ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। টাকার এই অঙ্কই বলে দিচ্ছে কাজের অগ্রগতি কেমন হয়েছে।’’ দত্তাবাদে বাবুল এ দিন জানান, মেট্রোর ৫৬টি স্তম্ভের মধ্যে ৪৭টি ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে। আর হাওড়ায় খুব শীঘ্রই টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটার কাজ শুরু করা হবে। তবে এর ফলে আশপাশের বহুতলের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করা হবে বলেই জানান মন্ত্রী।
দত্তাবাদে ৬০টির বেশি পরিবারের পুনর্বাসনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন কাজ আটকে ছিল। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতর ওই পরিবারগুলির জন্য আলাদা আবাসন তৈরি করে দিচ্ছে। সেই নির্মাণকাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক বলে জানান বাবুল।