—ফাইল চিত্র।
হঠাৎ কোনও বিপর্যয় যাতে না-ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই আপাতত চর্চা চলছে প্রশাসনের অন্দরে। তবে আজ না-হোক, কাল টালা ব্রিজের পরিবর্তে নতুন সেতু তৈরি করতেই হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বৃহস্পতিবার দিনভর টালা ব্রিজ পরীক্ষা করার পরে মুখ্যসচিবের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেন সেতু-বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেতুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কয়েকটি পরীক্ষার ফলাফল জানার পরে ৯ অক্টোবর মুখ্যসচিবের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেন তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, সম্ভাব্য ওজনের একটা হিসেব কষেই নতুন কোনও সেতু তৈরি করা হয়। ১৯৬২ সালে সম্ভাব্য ভার বহনের ক্ষমতা হিসেব করেই টালা সেতুর নকশা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু গত প্রায় ৫৭ বছরে গাড়ির সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে। ফলে ওই সেতুকে এখন যে-ভার বইতে হয়, তা মূল নকশার হিসেব ছাপিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন এ ভাবে চলতে চলতে সেতুর কর্মক্ষমতা কমেছে এমনিতেই। সেতুর ভিতরের উপদানগুলির
ক্ষয়ও হয়েছে। যেমন, সেতুর গার্ডারগুলির (সেতুর উপরিভাগ যে-সব ডেক জুড়ে তৈরি হয়)
মধ্যে বাঁধুনি ধরে রাখতে ‘প্রিস্ট্রেসিং ওয়্যার’ ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলির ক্ষয় হয়েছে। কিন্তু
ক’টি ওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের ক্ষতের গভীরতা কতটা, খালি চোখে সেটা বোঝা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, সেতুর উপরিভাগের শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে এই সব ওয়্যারের উপরেই।
সরকারি সূত্রের খবর, মাঝেরহাটে সেতু ভেঙে পড়ার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত রয়েছে সরকারের কাছে। তাই আচমকা কোনও বিপর্যয় ঠেকাতে কী কী করা দরকার, তা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন রায়না। তার মধ্যে সেতুর উপরের ভার কমানোটা খুবই জরুরি। সেই ভার দু’রকমের: চলমান ভার আর অবাঞ্ছিত ভার। কমাতে হবে দু’টোই। ১) চলমান ভার: এখন টালা সেতুর চার লেনে ছোট গাড়ি চলাচল করছে। লেন কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ দু’টি করার কথা ভাবা হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে সময়ের যে-কোনও বিন্দুতে গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেতুর ভার অনেকটা কম হবে। ইতিমধ্যে টালা সেতুতে বাস এবং বড় ভারী গাড়ি চালানো বন্ধ করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় যান চলাচলে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে বলে আধিকারিকদের একাংশের ধারণা।
২) অবাঞ্ছিত ভার: টালা সেতুর ফুটপাত সংলগ্ন জায়গায় একটি পাইপলাইন রয়েছে। আগে সেটি জল বা গ্যাস সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হত। তার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বালি জমে রয়েছে সেতুর ওই এলাকায়। তার মধ্যে জমেছে জলও। ফলে পাইপলাইন, বালি এবং জলের বাড়তি ওজন বহন করতে হচ্ছে সেতুটিকে। ইতিমধ্যেই অবশ্য সেই বালি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
ওই সেতুর কংক্রিটের ক্ষমতা কতটা, তার পরীক্ষা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলাফল সরকার হাতে পাবে শীঘ্রই। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, সেই ফলাফল ও টালা সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ৯ অক্টোবর সরকারকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন রায়না। তার পরে সরকার ওই সেতুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রেললাইন, সাধারণ মানুষের যাতায়াত, পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল, আর্থিক বিষয়-সহ সব কিছু মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। সেই জন্য চটজলদি কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়।