বিদ্যালয়গুলির শৌচাগার সংস্কারের অনিয়মে যুক্ত হল নতুন অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার অধীন বিদ্যালয়গুলির শৌচাগার সংস্কারের অনিয়মে যুক্ত হল নতুন অভিযোগ। সংস্কারের খরচ বাবদ ঠিকাদারদের দেওয়া রসিদে পুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সই নকল করার অভিযোগ উঠল। বিদ্যালয়ের নকল প্যাড বানিয়ে সেখানে শৌচাগার সংস্কারের খরচের হিসাব দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।
এই খাতে ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিলের বিস্তারিত জানতে ইতিমধ্যেই পুর কর্তৃপক্ষ ৫০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চিঠি ধরিয়েছেন। পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, শিক্ষকদের অনেকে সেই চিঠির উত্তর দিয়েছেন। সম্প্রতি কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা পুরসভার চিফ ম্যানেজার (শিক্ষা)-র ঘরে এসে জানান, ঠিকাদারদের দেওয়া রসিদে তাঁদের সই নকল করা হয়েছে। হিসাবে ব্যবহৃত স্কুলের প্যাডও নকল।
পুরসভার শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, ২০১৭-২০২০ সালের মধ্যে পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ৬৩টি শৌচাগারের প্রতিটির জন্য ৬০ হাজার টাকা করে খরচ দেখানো হয়েছে। যে যে বিদ্যালয়ে কাজ হয়েছে, নিয়ম মতো সেখানে নোটিস টাঙানোর কথা। কিন্তু শিক্ষকেরা পুরসভার শিক্ষা বিভাগকে জানিয়েছেন, ২০১৭-’২০ সালের মধ্যে শৌচাগারের সংস্কার চলাকালীন কোনও নোটিসই স্কুলে দেওয়া হয়নি। বিভাগের তরফে প্রধান শিক্ষকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শৌচাগারের সংস্কার শুরুর আগে স্কুল উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল কি না। উত্তরে শিক্ষকেরা জানান, তাঁদের অন্ধকারে রেখে শৌচাগার সংস্কার হয়েছে। কাজ চলাকালীন বা শেষে কোনও ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেননি।
পুরসভার শিক্ষা বিভাগের তরফে প্রধান শিক্ষকদের কাছে শেষ অনুচ্ছেদে (৫ নম্বর) বলা হয়েছিল, শিক্ষকেরা যে সব রসিদে সেই সময়ে সই করেছেন, তার তথ্য বিশদে জানাতে। উত্তরে তাঁরা বিভাগকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে ঘটনার সময়কার তথ্য তাঁরা মনে করতে পারছেন না। রসিদের ফোটোকপি তাঁদের দেখালে যথাযথ উত্তর দিতে পারবেন।
শৌচাগার সংস্কারে অনিয়মের বিরুদ্ধে সেই সময়ে সরব হয়েছিল বাম প্রভাবিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তদানীন্তন যুগ্ম পুর কমিশনারকে দু’বার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। টাকা নয়ছয়ের বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষের থেকে প্রধান শিক্ষকেরা সম্প্রতি চিঠি পাওয়ার পরেই ওই সংগঠন তৎকালীন প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক ডাকে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে। ছ’বছর আগে প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি। দোষীদের কঠোর শাস্তি দিক পুরসভা।’’
এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকদের থেকে শৌচাগার সংস্কারের অনিয়ম সংক্রান্ত ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে। খাতায়কলমে যে পদ্ধতিতে কাজের হিসাব দেখানো হয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই।’’