স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজার পরিকল্পনা বিধাননগর পুর নিগমের

পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি না করে পুর নিগম তৈরির সময়ে পরিষেবা নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করল পাঁচ মাসে বিধাননগরে মশাবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৪
Share:

পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি না করে পুর নিগম তৈরির সময়ে পরিষেবা নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করল পাঁচ মাসে বিধাননগরে মশাবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। এখনও আক্রান্ত ৫০০। নানা ধরনের জ্বরে আক্রান্ত প্রায় চার হাজার। পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিধাননগর পুর নিগম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজার পরিকল্পনা করছে। যদিও আশা দেখছেন না বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুর নিগম হওয়ায় প্রায় এক বছর পরেও পরিকাঠামো সংস্কার দূর অস্ত্, প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগই করে উঠতে পারেনি পুর নিগম।

Advertisement

পুরসভার দাবি, রাজ্য সরকারের অনুমতি না মেলায় কর্মী নিয়োগ করা যায়নি। তবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজার পরিকল্পনা হচ্ছে। সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর, বিধাননগর এবং একটি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে এক বছর আগে তৈরি হয়েছিল ৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে বিধাননগর পুর নিগম। সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ড এবং বিধাননগর ১৪টি ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল। পুরসভা সূত্রে খবর, রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কর্মী ছিল না। সেখানে সাবেক বিধাননগরেই ছিল প্রায় ১৩০ জন কর্মী। রাজারহাটে দু’টি এবং সল্টলেকে একটি মাতৃসদন ও কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে পরিকাঠামোর অবস্থা বাস্তবে ঠিক কোন স্তরে রয়েছে। পতঙ্গ বিশারদ কিংবা ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট যে ভাবে কলকাতা পুরসভা তৈরি করেছে, তার কিছুই নেই বিধাননগরে। অথচ সাবেক বিধাননগর পুরসভা ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির ঘোষণা করা হয়েছিল।

Advertisement

যদিও বিধানসভা নির্বাচনের কারণে কিছু সময় প্রশাসনিক কাজ বন্ধ থাকার যুক্তি দেখাচ্ছেন কর্তারা। তাঁদের দাবি, এরই ফলে চলতি বছরে মে মাসের শেষ দিক থেকে প্রথমে রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় মশার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। অবস্থা সামাল দিতে সল্টলেক থেকে কর্মী নিয়ে গিয়ে রাজারহাটে নিযুক্ত করে বিধাননগর পুর নিগম। এতে সল্টলেকের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। এর পরে জুলাই থেকে অবস্থা চরমে উঠলে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। যদিও এই সব যুক্তি মানতে রাজি নন বাসিন্দারা।

শুধু কর্মীই নয়, মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট দিশা না থাকায় জ্বরের প্রকোপ এবং মৃত্যু কোনওটাই থামেনি বলে অভিযোগ। বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি পুর নিগমের। বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হল। খেসারত দিতে হল বাসিন্দাদেরই। স্মার্টসিটি প্রতিযোগিতার সময়ে পুরসভার অতিসক্রিয়তা চোখে পড়েছিল। নিষ্ক্রিয় হয়ে রইল ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে।

অভিযোগ পুরোপুরি স্বীকার করেনি পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে পুরকর্মীরা যথাসাধ্য লড়াই করেছেন। রাজ্য সরকারও সহযোগিতা করেছে। তবে প্রশাসনের একাংশ প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ এক বছর ধরে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রাথমিক স্তরেই আটকে রয়েছে। এর পরে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতেও পিছুপা হবেন না তাঁরা।

এই বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘নিজস্ব ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে পতঙ্গ বিশারদ-সহ আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর শুধু কয়েক মাস ধরে নয়, বছরভর মশা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। চলতি বছরের শুরু থেকেই সেই কাজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement