প্রতীকী ছবি।
আদালতে কলকাতা পুরসভা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি হতে এমনিতেই দীর্ঘ সময় লাগত। অতিমারির পরে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, মোট ১৪টি আদালতে এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুরসভা সংক্রান্ত ২৩০৫৫টি মামলা ঝুলে রয়েছে। জমে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে শহরের বিভিন্ন আদালতের আইন আধিকারিকদের সঙ্গে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বৈঠকে বসছেন কলকাতা পুরসভার আইন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি মামলা ঠিক কোন জায়গায় আছে, তা প্রতিটি আদালতের ল’ অফিসারদের কাছে জানতে চেয়েছি। এ বিষয়ে আলিপুর আদালতের ল’ অফিসারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছি।’’
কলকাতা পুরসভার আইন বিভাগ সূত্রের খবর, সব থেকে বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল কোর্টে। অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালের দু’টি কোর্ট মিলে মোট ১৫৬০০টি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির জন্য কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের কাছেই হাডকো ভবনের ছ’তলায় অ্যাসেসমেন্ট
ট্রাইবুনালের দু’টি আদালত পুরোপুরি বন্ধ। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ট্রাইবুনালস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্তকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার পাঠানো সম্পত্তিকরের বিলে টাকার অঙ্ক বেশি থাকলে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাধারণ নাগরিকেরা অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনালে মামলা করেন। আবার শরিকি সম্পত্তির বিবাদ থেকে শুরু করে কেউ বাড়িতে ভাড়াটে বসালে সেই সংক্রান্ত মামলারও নিষ্পত্তি হয় অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল কোর্টে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই আদালত বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। প্রচুর মানুষ এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে নিত্যদিন ফোন করছেন। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকায় কোনও কাজ করা যাচ্ছে না।’’
হাইকোর্টে পুরসভা সংক্রান্ত মামলা ঝুলে রয়েছে ৪৭০০টি। মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং ট্রাইবুনালে জমে থাকা মামলার সংখ্যা ৮১০টি। মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বকেয়া মামলা রয়েছে ৫৫০টি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিমারি পরিস্থিতিতে হাডকো ভবনের পাঁচতলায় মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং ট্রাইবুনাল এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ থাকায় প্রচুর মানুষ নানা ভাবে সমস্যায় পড়েছেন।
বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভা কোনও বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দিলে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নাগরিকেরা বিল্ডিং ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারেন। আবার উল্টোটা, অর্থাৎ কোনও বিল্ডিং রেগুলারাইজ করার নির্দেশ দিলে অভিযোগকারী এই আদালতে পাল্টা মামলা করতে পারেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এই আদালত বন্ধ থাকায় সব আটকে রয়েছে।’’ তবে মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ থাকায় পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ বেশ ফাঁপরে। ওই বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বেআইনি বাড়ি নির্মাণের বিরুদ্ধে পুরসভা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে প্রাথমিক ভাবে ওই মামলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ওঠে। কিন্তু অতিমারির জন্য সেই প্রক্রিয়া বেশ বিলম্বিত হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, আলিপুর, শিয়ালদহ এবং নগর দায়রা আদালতে জমে থাকা পুরসভা সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা যথাক্রমে ৫০০, ৪০০ এবং ৩৫০টি। সুপ্রিম কোর্টে পুরসভার ২৫টি মামলা চলছে। এ ছাড়াও, জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা ঝুলে ৩০টি। উত্তরপাড়ায় পুরসভার বিশাল জমি রয়েছে। সেই জমি সংক্রান্ত ১০টি মামলা শ্রীরামপুর আদালতে চলছে। পুরসভায় চাকরি সংক্রান্ত বিষয়েও ৮০টি মামলা ঝুলে রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে আগামী ২৪ জুলাই পুর ভবনে লোক আদালত বসবে।