Narendra Modi

মোদীর সফরে বন্ধ জাতীয় গ্রন্থাগার

পাঠকমহলের একাংশের দাবি, এর আগে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বহু ভিআইপি এসেছেন জাতীয় গ্রন্থাগারে। কিন্তু সে জন্য পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়নি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:০০
Share:

সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মদিনে শহরে আসছেন মোদী। -নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের জন্য ২৪ ঘণ্টার বেশি ন্যাশনাল লাইব্রেরি বা জাতীয় গ্রন্থাগার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। আর সেই কারণে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। পাঠকমহলের একাংশের দাবি, এর আগে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বহু ভিআইপি এসেছেন জাতীয় গ্রন্থাগারে। কিন্তু সে জন্য পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়নি।

Advertisement

কাল, শনিবার সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মদিনে শহরে আসছেন মোদী। জাতীয় গ্রন্থাগারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর থাকার কথা। তার জন্য আজ, শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে গ্রন্থাগার। শনিবারও তা বন্ধ থাকবে।

কর্তৃপক্ষের পক্ষে গ্রন্থাগারের ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ কে কোচিকোসি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লি থেকে যা নির্দেশ এসেছে তাই পালন করেছি। এর আগে অন্য ভিভিআইপিদের তুলনায় এ বার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আটোসাঁটো করা উচিত বলে মনে করেই হয়তো লাইব্রেরি দু’দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবু আমরা ২২ তারিখ সাড়ে তিনটে পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

Advertisement

জাতীয় গ্রন্থাগার দু’দিন বন্ধ থাকার প্রতিবাদে প্রাক্তন কর্মী তথা পাঠক শৈবাল চক্রবর্তী কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছেন। শৈবালবাবুর কথায়, “ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে যাঁরা পড়তে আসেন, তাঁরা পড়াশোনা করেন ভাষা ভবনে। ভাষাভবনের সঙ্গে যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেই বেলভেডিয়ার হাউসের কার্যত কোনও সম্পর্কই নেই। ভাষা ভবন থেকে বেলভেডিয়ার হাউসের দূরত্ব অনেকখানি। বেলভেডিয়ার ভবনে ঢোকার জন্য এক নম্বর গেট ব্যবহার করে বাকি গেটগুলো সাধারণ পাঠকের জন্য খোলা রাখতেই পারতেন লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।” ৩৩ একর জমির উপর থাকা এই গ্রন্থাগারে ঢোকার জন্য রয়েছে পাঁচটি গেট। এর মধ্যে ৪ এবং ৫ নম্বর গেটটি একদম ভাষা ভবনের কাছেই। সাধারণ পাঠকদের জন্য ওই দু'টি গেট খোলা রাখাই যেত বলে পাঠকদের মত।

প্রবীণ বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বিরক্ত এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে। তিনি বলছেন, "ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে কি পড়াশোনা কখনও বন্ধ থাকে? ন্যাশনাল লাইব্রেরির মতো সাংস্কৃতিক গরিমার প্রতিষ্ঠানগুলি রাজনীতির ছোঁয়াচ থেকে দূরে রাখাই উচিত ছিল।"রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক চিন্ময় গুহও বলেন, "বেশির ভাগ দেশেই এমনটা কখনও ঘটত না!"

কেন্দ্রের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলির কর্মীদের ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব অ্যাকশন কমিটি’-র রাজ্য সম্পাদক শৈবালবাবু বলেন, “২০০৭ সালে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম। আমরা যেখানে পড়াশোনা করি সেই জায়গাও উনি ঘুরে দেখেন। ওঁর আসার জন্য কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায় আসার সময়েও এত কড়াকড়ি ছিল না। রাজীব গাঁধী যখন আসেন তখনও পড়া বন্ধ হয়নি।” জাতীয় গ্রন্থাগারের আর এক পাঠক জয়ন্তী মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এমনিতেই আমরা যারা সিনিয়র সিটিজেন তাঁরা রোজ লাইব্রেরি যেতে পারি না। কোনও ভিআইপি-র জন্য ন্যাশনাল লাইব্রেরির পড়াশোনা বন্ধ করা হয়েছে বলে তো শুনিনি।” গোড়ায় দু’দিন বন্ধ থাকার কথা বলে বিজ্ঞপ্তি দিলেও ২২ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা রাখার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement