ডিন রজত রায়। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুরকাণ্ডে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে তলব করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ তাঁকে সল্টলেকের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৪ অগস্ট রাজ্য সরকার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠিয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত ওই নোটিসে কমিশন জানিয়েছিল, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনার আগে ডিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মৃত ছাত্রের সহ-আবাসিকেরা। তার পরেও কী করে প্রথম বর্ষের (স্নাতক) ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিশন নোটিসে জানিয়েছিল, সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যেই কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে অবহেলার কথা উঠে এসেছে। নোটিসে লেখা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট যদি সত্যি হয়, তা হলে গোটা ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, এই বিষয়টি সবিস্তারে জানতে ডিনকে ডেকে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হতে পারে, গত ৯ অগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে নবাগত পড়ুয়ার পড়ে যাওয়ার ঘটনার প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগে হস্টেল থেকে ফোন পেয়ে তিনি কী পদক্ষেপ করেছিলেন?
গত বৃহস্পতিবারই লালবাজারে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ডিন। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই রাতের ঘটনার ব্যাপারে তিনি কী জানেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রজতের কাছে। তার জবাবে ডিন জানিয়েছিলেন, সেই দিন রাত ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ এক ছাত্র তাঁকে ফোনে জানান, হস্টেলের এক ছাত্রকে নিয়ে ‘রাজনীতি’ হচ্ছে। তিনি সুপারকে বিষয়টি দেখতেও বলেন। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সুপার আদৌ খোঁজ নিয়েছেন কি না, ডিন অবশ্য সেই খবর নেননি। রাত ১২টা নাগাদ সুপার ফোনে ডিনকে জানান, এক ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। ডিন আগে সক্রিয় হলে এই ঘটনা আটকানো যেত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনেও।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় হস্টেলের ‘চরম উচ্ছৃঙ্খলতা’র কথাও পুলিশকে জানিয়েছিলেন ডিন। তাঁর দাবি ছিল, হস্টেলে ‘কড়া নিয়মকানুন’ বা ‘আইনের শাসন’ (অন্তত ঘটনার দিন পর্যন্ত) কার্যকর করা যায়নি। কিন্তু সব কিছু জানার পরেও তিনি কেন এত দিন চুপ ছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি আছে কি না, থাকলে তার ভূমিকা কী ছিল, হস্টেল সুপারের ভূমিকা কী ছিল, সিসি ক্যামেরা কোথাও আছে কি না— এ রকম ২৭টি প্রশ্ন করা হয়েছিল রজতকে। মানবাধিকার কমিশনের দফতরে গিয়েও ডিন এই ধরনেরই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।