প্রতীকী ছবি।
অনুমোদন ছাড়াই হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন দু’টি জায়গায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের অবস্থা সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়েছিল ২০১৭ সালে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার এমন নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে উঠে এসেছিল, হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন গুলমোহর রেলওয়ে কলোনি এবং হাওড়া ডিজ়েল শেড সংলগ্ন বামনগাছি রেল কোয়ার্টার্সে যথাক্রমে একটি এবং চারটি গভীর নলকূপ রয়েছে। গুলমোহর কলোনির নলকূপটি ১০ হাজার গ্যালন/ঘণ্টা (গ্যালন পার আওয়ার বা জিপিএইচ) এবং বামনগাছি রেল কোয়ার্টার্সের চারটি নলকূপের মধ্যে তিনটি ১০ হাজার এবং আর একটি ৫ হাজার জিপিএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন। অনুমোদন ছাড়াই ওই নলকূপের মাধ্যমে জল উত্তোলনের প্রসঙ্গ ওঠার পরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেয় পরিবেশ আদালত।
সেই পরিদর্শনের উপরে ভিত্তি করে চলতি মাসের শুরুতে হলফনামা দিয়ে পর্ষদ আদালতকে জানায়, পাঁচটি গভীর নলকূপের কোনওটিরই ছাড়পত্র নেই। বামনগাছি রেল কোয়ার্টার্সের চারটি নলকূপ সম্পর্কে রেলের কাছ থেকে পর্ষদ জানতে পেরেছে, ১০ হাজার জিপিএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি নলকূপের মাধ্যমে এখনও জল তোলা হয়। তবে পাঁচ হাজার জিপিএইচ-এর নলকূপটি আর ব্যবহার করা হয় না।
রেল আবার পরিবেশ আদালতে জানায়, ২০১৯ সালে জল পরিশোধনের প্লান্টে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গুলমোহর কলোনিতে পানীয় জল সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে জরুরি ভিত্তিতে ওই গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল। যদিও সেটির আর দরকার হয় না। পাশাপাশি, বামনগাছি রেলওয়ে কোয়ার্টার্সের নলকূপের ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
যার ভিত্তিতে এ দিন পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, জল উত্তোলনের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত রেল কোনও নলকূপই ব্যবহার করতে পারবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত পদক্ষেপের জন্য ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’-কে নির্দেশও দিয়েছে আদালত। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘রেলের মতো একটি প্রতিষ্ঠান কী ভাবে অনুমোদন ছাড়া এত দিন ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করল, সেটাই আশ্চর্যের।’’ আর সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘রেলের আচরণেই স্পষ্ট, অগ্রাধিকারের তালিকায় সরকারের কাছে পরিবেশ ঠিক কোথায় রয়েছে!’’