ব্রিগেডে আসা কর্মী-সমর্থকদের জন্য গ্যাস জ্বালিয়ে চলছে রান্না। পাশে পাত পেড়ে চলছে খাওয়াদাওয়া। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সমর্থক বোঝাই বাস পরে এসেছে। মাছ, মাংস আর আনাজ বোঝাই গাড়ি সবার আগে। কোনও জেলা পাঠিয়ে দিয়েছে ভোরে। কোনও জেলা আবার আগের রাতেই আনাজের গাড়ির সঙ্গে রাঁধুনি পাঠিয়েছে ব্রিগেডে! দিনভর জমিয়ে রান্না-খাওয়া সেরে তাঁদেরই কেউ কেউ মজা করে বলেছেন, ‘‘এমন ব্রিগেড বার বার হোক।’’
রবিবার ময়দান চত্বরে দেখা গেল, বিজেপির ব্রিগেডের সভায় আগতদের খাওয়াদাওয়া চলছে সংগঠিত ভাবে। বুথ ধরে সংগঠনের তরফেই বাজার করে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন কর্মী এবং সমর্থকেরা। কার্যত চলছে ‘বুথ-হেঁশেল’! কেউ ব্যবস্থা করেছেন ডিম-ভাত, কেউ মাংস। কোনও বুথে মাছের ঝোল রান্না হল ময়দান চত্বরেই পরিবেশ-বিধি ভেঙে গ্যাস জ্বালিয়ে! গ্যাসের দাম নিয়ে প্রশ্নে হাওড়া থেকে আসা এক জন বললেন, ‘‘গ্যাসে আমাদের ছেঁকা লাগে না, ছেঁকা লাগার অনেক কিছু আছে এই রাজ্যে।’’
মেদিনীপুরের পটাশপুর থেকে আসা সৌরেন্দ্র ভুঁইয়া আবার জানালেন, বাসে তাঁরা মোট ৯৭ জন এসেছেন। তবে আগেই অবশ্য ছোট গাড়িতে রান্নার সামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্রিগেডে। মাছের ঝোল রান্না করতে বেলা হয়ে যাওয়ায় গোল বেঁধেছে। সৌরেন্দ্র বললেন, ‘‘ঝোলের নুন দেখতে গিয়ে সভায় যাওয়া হল না। রান্না শেষ করতে দেরি হয়ে গেল। তাই ভাবলাম, দলের লোকের জন্য রান্নার ব্যবস্থা দেখলে কাজে দেবে।’’ একই অবস্থা ডায়মন্ড হারবার থেকে আসা একটি দলের। ময়দান চত্বরে তাঁবু টাঙিয়ে তাঁদের মাংস-ভাত রান্না এ দিন বিকেল চারটেতেও শেষ হয়নি। দলের মাথা শ্যামল কর্মকার বললেন, ‘‘আগে সিপিএম করতাম। তখনও অঞ্চল কমিটির তরফে রান্না-খাওয়ার দায়িত্ব আমার উপরে ছিল। সংগঠিত ভাবে কী করে এ সব করতে হয় তাই ভাল জানি।’’
কাঁথি থেকে দু’টি বাসে প্রায় একশো জনকে নিয়ে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী শিবনারায়ণ বেরা। তিনি বলেন, ‘‘মোদীর ভাষণ শোনার আগেই সবাইকে ডিম-ভাত খাইয়ে দিলাম।’’ তাঁর এক সহযোগীর মন্তব্য, ‘‘এখনও তো দাদা সে ভাবে এ দলে ডালপালা মেলতে পারেননি। তা হলে আমরাও মাংস খাওয়াতাম।’’
খাওয়ানোতেও কি প্রতিযোগিতা? পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা এক কর্মীর অনুযোগ, ‘‘আমরা ডিম-ভাতও পাইনি। কলকাতা ঘুরতে এসে নিরামিষে হয়?’’ নদিয়ার তেহট্টের যূথিকা হালদার জানালেন, তাঁদের মেনু এ বার নিরামিষ। যূথিকা বলেন, ‘‘সেই রাতে বাস ছেড়েছে। নিরামিষ হলেও মেনু খারাপ নয়। ডাল, পাঁচমিশালি তরকারি আর চিপস।’’ খাওয়া শেষে আসানসোলের শুখেন্দু হিরা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে একটি দলের মিছিলে ডিম-ভাত খাওয়া নিয়ে এক বার রসিকতা হয়েছিল। দল বদলেছি। কিন্তু খাওয়াটা ছাড়া যায়নি।’’