দোসর: (বাঁ দিকে) অনীক ও অনীশ। শুক্রবার, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
২৫ মিনিটের ফারাকে জন্ম দুই ভাইয়ের। মাধ্যমিকে অবশ্য তাদের প্রাপ্ত নম্বরের ফারাক মাত্র দুই। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়া এই যমজ ভাইদের নাম উঠেছে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায়। বড় অনীশ বারুইয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে সে। ৬৮৭ পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ছোট অনীক। স্কুলের নিরিখে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ওই দুই ভাই। অনীশ, অনীক-সহ নরেন্দ্রপুরের ১২ জন ছাত্র এ বার জায়গা করে নিয়েছে মাধ্যমিকের প্রথম দশে।
দু’জনের পছন্দ-অপছন্দ অনেকটা একই। পড়াশোনার বাইরে দু’জনই ভালবাসে চুটিয়ে খেলাধুলো করতে। ফুটবল দু’জনেরই প্রিয় খেলা। পড়াশোনার পাশাপাশি অনীশ-অনীকের ফুটবল দক্ষতার প্রশংসা শোনা গেল স্কুলের শিক্ষক-কর্মীদের মুখেও। ভবিষ্যতের পথটাও একই রকম বেছেছে দুই ভাই। দু’জনেই জানায়, তাদের ডাক্তার হওয়াই লক্ষ্য।
বাঁকুড়ার ওন্দার বাসিন্দা অনীশ-অনীক। বাবা স্কুলের শিক্ষক। ছেলেবেলায় বাঁকুড়ার স্কুলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে তারা ভর্তি হয় নরেন্দ্রপুরে। তাদের মা সুপর্ণা বারুই জানান, দু’জনের মধ্যে একাত্মতা খুব। পড়াশোনা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য করে তারা। প্রাথমিকেও প্রথম ও দ্বিতীয় হত তারা। কিন্তু নরেন্দ্রপুরে এসে তেমনটা না হলেও প্রথম দশে থাকত। কখনও অনীশ সামান্য বেশি নম্বর পেত। আবার কখনও অনীক। সুপর্ণা বলেন, “ওরা পড়াশোনায় ভাল। তাই ভাল ফল করবে জানতাম। কিন্তু, দু’জনেই মেধা তালিকায় জায়গা করে নেবে, এটা ভাবতে পারিনি।”
এমন ফলের কথা ভাবেনি অনীশ-অনীকও। অনীশের কথায়, “স্কুলের বন্ধুরা অনেকেই আগে আমার থেকে ভাল ফল করেছে। তাই স্কুলে প্রথম হব বা মেধা তালিকায় জায়গা পাব, সত্যিই ভাবিনি। খুবই ভাল লাগছে।” অনীক বলে, “পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম। তবে এতটা ভাবিনি। সব থেকে ভাল লাগছে, দাদা-সহ এত জন বন্ধু ভাল ফল করায়।”
দুই ভাইয়ের মতে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য করাটা কাজে দিয়েছে। দিনে মোটামুটি ঘণ্টা ছয়েক বরাদ্দ ছিল পড়ার জন্য। পরীক্ষা বলে আলাদা চাপ ছিল না। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি, খেলাধুলো ও অন্যান্য কাজও চলেছে চুটিয়ে।
অনীশ-অনীকের বাবা প্রলয় বারুই বলেন, “এই ফলের অনেকটা কৃতিত্ব স্কুলের শিক্ষকদের। আমরা কখনওই পড়াশোনার জন্য চাপ দিইনি, আগামী দিনেও দেব না। ওদের যা ইচ্ছে, তা নিয়েই পড়াশোনা করবে। আগে ভাল মানুষ হোক, এটাই চাই।”
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ বলেন, “অনীশ-অনীকের মতো আরও ১২ জন মেধা তালিকায় রয়েছে। অন্যদের ফলাফলও সন্তোষজনক। এ বছর টেস্টের পরেও ছাত্রদের স্কুলে রেখে পড়াশোনা করিয়েছি। ভাল ফলের এটাও কারণ।”