ছবি: সংগৃহীত।
‘দল পাশে আছে কি?’
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির খবরে শনিবার রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরেফিরে আসছিল এই প্রশ্নটাই। অনেকটা একই ধাঁচে দিনভর তাঁর পাড়া নাকতলার অন্দরেও ঘুরছে প্রশ্ন— পাড়ার পুজোর হোর্ডিংয়ে পার্থদার ছবি আর কখনও দেখা যাবে তো?
বাম আমলে পার্থের পাড়ার পুজো, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের মণ্ডপে পা পড়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। তবে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পরে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে যায় পার্থের নাম। কিন্তু এ বার নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে পার্থের গ্রেফতারি এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের ঘটনা অস্বস্তি বাড়িয়েছে ওই পুজো উদ্যোক্তাদের। কারণ, ওই ক্লাবের পুজোর পুরনো হোর্ডিংয়ে অর্পিতার ছবি, মঞ্চে অর্পিতা-পার্থের ছবি নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। এমনকি অর্পিতা ওই পুজো কমিটির সদস্য বলেও দাবি অনেকের।
এ দিন সন্ধ্যায় ওই পুজোমণ্ডপের সামনে পৌঁছে দেখা গেল, পরিবেশ রীতিমতো থমথমে। পার্থের গ্রেফতার-প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ ক্লাবের সদস্যদের। হাবভাব এমন, যেন পুজো চলবে নিজের ছন্দেই। এর দেড়শো মিটারের মধ্যেই পার্থের বাড়ি। লোহার গার্ডরেলের সামনে দু’এক জন উদাস চোখে চেয়ে সে দিকে। শুক্রবার থেকে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ওই পাড়াতেই রুদ্ধশ্বাস নাটকের সাক্ষী থেকেছে শহর। ইডি, পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি, সংবাদমাধ্যমের ভিড়— প্রায় বিনিদ্র রজনী কেটেছে গোটা পাড়ার। তবে বাসিন্দাদের দাবি, পাড়ার মানুষের পাশে সব সময়েই থাকতেন পার্থ।
তবে কি মন্ত্রীর গ্রেফতারে জৌলুস হারাতে চলেছে পাড়ার পুজোও? উদ্যোক্তাদের একাংশের দাবি, পুজোয় পার্থের উপস্থিতি মুকুটে পালকের মতো। পালক খসলেও মুকুট অটুট থাকবে। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে প্রায় পাঁচশো সদস্যের পরিশ্রম। ওই পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস বলেন, ‘‘পার্থদা ১১ বছর মন্ত্রী আছেন। আর পুজোর বয়স ৩৮ বছর। পার্থদার নাম আমাদের প্রচার পেতে সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু পুজোর শ্রীবৃদ্ধির পিছনে রয়েছে ক্লাবের সদস্যদের নিরলস পরিশ্রম। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা আমাদের পুজোকে বিতর্কে জড়াতে চাইছে। তাই পুরনো হোর্ডিং, ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।’’
উদ্যোক্তাদের দাবি, বছর তিন-চার আগে অর্পিতার ছবি দিয়ে কয়েকটি স্বাগত-বার্তার হোর্ডিং তৈরি করা হয়। অঞ্জনের দাবি, ‘‘সে বছর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে অর্পিতার ছবি-সহ কয়েকটি হোর্ডিং হয়। ওঁর প্রোফাইল আমাদের ভাল লেগেছিল। কিন্তু উনি ক্লাবের সদস্য নন, কোনও দিন ছিলেন না। পার্থদার সঙ্গে উনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছবি তুলেছিলেন।’’
আগামী দিনে কি তবে নাকতলার হোর্ডিং-ব্যানারে থাকবে পার্থের নাম বা ছবি? অঞ্জনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সেটা পার্থদার সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করা হবে। দু’বছর আগে উনি পুজোর চেয়ারম্যান ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর কারণে গত বছর দাদাই পুজোর প্রচারে ওঁর নাম দিতে বারণ করেন।’’