হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আহত। —ফাইল ছবি
নাগেরবাজার কাজিপাড়ার বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মঙ্গলবার রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাকি ন’জন আরজি কর এবং এসএসকেএম হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী আহতদের মধ্যে শুভম দে এবং অজিত হালদারের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সঙ্কট কাটার লক্ষণ নেই সঙ্গীতা প্রসাদেরও। বিস্ফোরণে মৃত শিশুর মা সীতা ঘোষের অবস্থা সম্পর্কেও ৭২ ঘণ্টা কাটার আগে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বিস্ফোরণে মাথায় ভীষণ চোট পেয়েছেন শুভম। মধ্যমগ্রামের গ্রিন পার্কের ওই বাসিন্দার শারীরিক পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি বুধবারেও। এসএসকেএমের আইসিইউয়ে আছেন তিনি। তাঁর মাথার মধ্যে একটি স্প্লিন্টার রয়েছে বলে দাবি তাঁর কাকা রণজিৎ দে-র। সেই জন্যই এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই অবস্থায় অস্ত্রোপচার করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিউরো সার্জেনদের তরফে জানানো হয়েছে, এখন কোনও ভাবেই অস্ত্রোপচার করা যাবে না। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’’ স্যালাইনের সঙ্গে সঙ্গে শুভমকে কিছু ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সারা দিন কিছুই খাননি তিনি। ডাকাডাকি করলে কিছু আওয়াজ করছেন মাত্র। নাগেরবাজারের স্থানীয় কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস এ দিন শুভমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হওয়ার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পরেও জ্ঞান ফেরেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা অজিতবাবুর। তিনি আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের খবর, অজিতবাবুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। তিনি সার্জারি বিভাগের পাঁচতলায় আইসিইউয়ে আছেন। অজিতবাবুর বোন যমুনা মণ্ডল বললেন, ‘‘অজিত আর আমি ফল বিক্রি করি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ অজিতকে কাজিপাড়া মোড়ে নামিয়ে আমি একটু দূরে অর্জুনপুর মোড়ে ফল নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। বিস্ফোরণের একটু পরেই এক পরিচিত ব্যক্তি ফোন করে আমাকে তাড়়াতাড়ি আসতে বলেন। কাজিপাড়ায় গিয়ে দেখি, ভাইকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
বিস্ফোরণে গুরুতর আহত সঙ্গীতা প্রসাদের অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। তিনি এলাকারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানান, সঙ্গীতাদেবী এখনও অচৈতন্য অবস্থায় রয়েছেন।
আরজি করের সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন বিস্ফোরণে আহত ছ’জন। বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অজিতবাবু ছাড়াও কাজিপাড়ার বাসিন্দা শরৎ শেঠির অবস্থা আশঙ্কাজনক। সার্জারি বিভাগের নীচের তলায় আছেন নবকুমার দাস। বিস্ফোরণস্থলের পাশেই একটি দোকানে কাজ করেন তিনি। হাসপাতালের শয্যা শুয়ে নববাবু বললেন, ‘‘দোকানে রুটি কিনছিলাম। রুটি নেওয়া মাত্রই বিকট আওয়াজ। তার পরে আর কিছু মনে নেই। হাসপাতালে এসে জ্ঞান ফিরল।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে নববাবুর কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে দু’টি পা। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে শরৎ শেঠির। তিনি আছেন নববাবুর কাছাকাছি শয্যায়। তাঁর পরিবারের এক জন বলেন, ‘‘উনি বিস্ফোরণস্থলের কাছাকাছি দাঁড়়িয়ে ছিলেন।’’ নৈহাটির বাসিন্দা রাজেশ রাজভড়ও বিস্ফোরণে আহত হন। কিছু ক্ষণ চিকিৎসার পরে মঙ্গলবার রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।