কলকাতা পুরসভা ‘মডেল’-কে হাতিয়ার করে এ বার গোটা রাজ্যে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া দমনে পরিকল্পনা তৈরি করতে বলল নবান্ন।
পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে কলকাতা পুরসভা যে পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে, রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলি তা পারেনি। এমনকী, কলকাতা লাগোয়া দুই পুরসভা বিধাননগর ও হাওড়াও এই কাজে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করে নবান্ন। কলকাতা পুরসভা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা রাজ্যে যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি করতে নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত বছর রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির পাশাপাশি মশাবাহিত এনসেফ্যালাইটিসও হানা দিয়েছিল। আর তখনই ধরা পড়েছিল যে ওই সব মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে যথাযথ পরিকাঠামোই নেই ওই সব পুরসভার। আর তাই জানুয়ারি মাস থেকে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা অভিযান শুরু করতে বললেও, কলকাতা পুরসভা ছাড়া অন্য কোনও পুরসভা তা শুরুই করতে পারেনি।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই মুখ্যসচিব এ দিন রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসক এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সঙ্গে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া দমন নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। সেখানে কলকাতা, হাওড়া ও বিধাননগর পুরসভার কমিশনার ও পদস্থ অফিসারেরা উপস্থিত ছিলেন।
পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে একমাত্র কলকাতা পুরসভায় ৪ জন পতঙ্গবিদ রয়েছেন। অন্য কোনও পুরসভা কিংবা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে এক জনও পতঙ্গবিদ নেই। কোন এলাকায় কী ধরনের মশার প্রাদুর্ভাব ঘটল, কোন ধরনের মশা কোথায় বংশবিস্তার করল, তা খতিয়ে দেখা এবং সমীক্ষার কাজ করেন পতঙ্গবিদেরা। পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে পতঙ্গবিদেরাই মূল কাজটি করে থাকেন। এমতাবস্থায় অবিলম্বে রাজ্যে ৪০ জন পতঙ্গবিদ নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। বিভিন্ন জেলা এবং পুর এলাকায় তাদের নিয়োগ করা হবে। এ দিনের বৈঠকে মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন, স্কুলকলেজগুলিতে জল যেন না জমে তা সুনিশ্চিত করতে। নিয়মিত ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের উপরেও গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। নজরদারির অভাবে স্কুলগুলি অনেক ক্ষেত্রে মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হচ্ছে বলে নবান্নে রিপোর্ট এসেছে।
জেলাগুলিতে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে, এ দিনের ভিডিও কনফারেন্সে সে কথাও জানিয়ে দেন মুখ্যসচিব। তাঁর নির্দেশ, ১৫ দিন অন্তর বাড়ি বাড়ি যেতে হবে স্বাস্থ্য কর্মীদের। কলকাতার মতো প্রচার এবং প্রতিরোধের কাজ চালাতে হবে।
২০১২-১৩ সালে কলকাতায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ভয়ঙ্কর আকার নেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন বছরের শুরু থেকেই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে নামতে হবে পুরকর্মীদের। সেই নির্দেশ মেনে ফলও পেয়েছে কলকাতা। ২০১৩ সালের পর থেকে কলকাতায় মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও কমেছে। এ বারও জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মিছিল বের করে কলকাতা পুর প্রশাসন। সেই উদাহরণ তুলে মুখ্যসচিব সকল জেলা প্রশাসনকে সচেতনতার কাজে গুরুত্ব দিতে বলেন।
তবে লাগোয়া পুর এলাকাগুলির মশাবাহিত রোগ নিবারণের পরিকাঠামো না থাকায় কলকাতা শহরে ওই রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই গিয়েছে। দিল্লি থেকে ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কর্তারা কলকাতায় এসে সে কথাই জানিয়ে গিয়েছেন। কলকাতা শহর লাগোয়া ১০টি পুরসভাকে নিয়ে বৈঠক করে জানানো হয়েছিল পরিকাঠামো গড়তে কার কী প্রয়োজন তা তাদের জানাতে। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।
এ দিন মুখ্যসচিবের কথাতেও সেই বার্তা শোনা গিয়েছে। তিনি জানান, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগী নানা জায়গায় যান। তাই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা খুব বেশি। এক জায়গার রোগী অন্যত্র গিয়ে
তা ছড়াতে পারেন। চলতি বছরে রাজ্যে ১০০০টি ফিভার ক্যাম্প করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি, বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং রক্তপরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সহায়তা চেয়েছেন মুখ্যসচিব। মশাবাহিত রোগে আক্রান্তেরা কোনও তথ্য যেন গোপন না করেন, তা দেখতে বলা হয়েছে। কারণ ওই তথ্য জানলে প্রতিরোধের কাজ সহজ হবে। এর পরেও কেউ তা গোপন করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে।
গত বছর বিধাননগর পুর এলাকায় ১০ জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছিলেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এ বার শুরু থেকেই ওই পুরসভাকে তৎপর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।