খপ্পরে: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর থেকে আটকদের নিয়ে যাচ্ছে ‘উইনার্স’ বাহিনী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
রাতের কলকাতা কতটা নিরাপদ? শুক্রবার তা দেখতে বেরিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের নিরাপত্তার অভাবই চোখে পড়েছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’-এর। যার জেরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, তা হলে কি যে কোনও রাতে এটাই ‘স্বাভাবিক’ ছবি? রবিবার দুপুরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে থেকে তাঁদের হাতে ছ’জন আটক হওয়ার পরে সেই প্রশ্নই জোরদার হয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে এবং মহিলাদের নিরাপত্তায় আরও জোর দিতে এ বার তাই বাড়ানো হচ্ছে ‘উইনার্স’-এর সদস্য-সংখ্যা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে অন্তত তেমনই খবর। বড়দিনের আগেই ‘উইনার্স’-এ ১০ জন মহিলার নিযুক্তির সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা।
পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি ‘উইনার্স’-এ থাকা এক মহিলা কনস্টেবল পুলিশের পরীক্ষায় পাশ করে অন্য পদে চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছেন। বর্তমানে ‘উইনার্স’-এ ২৩ জন মহিলা কনস্টেবলের পাশাপাশি রয়েছেন চার মহিলা অফিসার। তাঁদের সঙ্গে আরও ১০ জন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে নতুন মেয়েদের প্রশিক্ষণ চলছে। এখন বাহিনীতে থাকা কয়েক জনই তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অন্য সব কিছু আত্মস্থ করে ফেললেও মোটরবাইক চালানো এবং পথ-বিধি সংক্রান্ত কিছু বিষয় তাঁদের শেখা বাকি। সেই শেখার প্রক্রিয়া মিটলেই কাজে যোগ দেবেন নতুন মেয়েরা। উইনার্স হিসেবে এর পরে কাজ করবেন মোট ৩৭ জন।’’
গত বছরের জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে বিশেষ বাইকবাহিনী তৈরির পরিকল্পনা করে কলকাতা পুলিশ। উদ্দেশ্য ছিল, গত কয়েক বছরে শহরের যে সব এলাকা বা রাস্তা থেকে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার বা যৌন হেনস্থার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি এসেছে সেখানে নিয়মিত নজরদারি চালানো। একই সঙ্গে প্রয়োজনে যানশাসনেও ‘উইনার্স’ দল সাহায্য করবে বলে ঠিক হয়। এই বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘প্রথম যে দিন বাহিনী তৈরির সিদ্ধান্ত হয়, তখন মাত্র তিন মহিলাকে পাওয়া গিয়েছিল যাঁরা মোটরবাইক চালাতে পারেন। এর পরে পুলিশের নানা শাখা থেকে যাঁদের বাছা হয় তাঁরা কেউ মার্শাল আর্টস, কেউ কিক বক্সিংয়ে পারদর্শী। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পরে তাঁরাই কাজ শুরু করেন উইনার্স হিসেবে।’’
কাজ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে দু’শোরও বেশি অভিযুক্ত এই বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় বলে পুলিশের দাবি। অভিযানে গিয়ে সমস্যায় পড়ার অভিজ্ঞতাও তাঁদের নেহাত কম নয়। ‘উইনার্স’-এর এক সদস্যের কথায়, ‘‘কত বার হয়েছে, কাউকে ধরতে গিয়ে সেই অভিযুক্তের হামলায় আমাদেরই কারও হাতে বা গায়ে লেগেছে। আমাদেরই একটি মেয়েকে তো আবার টাকা নিয়ে পার্কে গিয়ে সঙ্গ দেওয়ার জন্যও বলেছিল এক যুবক। তবে সকলে যখন একসঙ্গে বাইক নিয়ে বেরোই, সব ভয় কেটে যায়।’’
তেমনই হায়দরাবাদের কাছে তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে শুক্রবার রাত এবং রবিবার দুপুরে শহরের নিরাপত্তার বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে অভিযানে বেরিয়েছিল ‘উইনার্স’। মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা এবং প্রকাশ্যে মদ্যপানের অভিযোগে তাঁদের হাতে এই দু’দিনে আটক হয়েছে ২০ জন। সামনেই বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ। তাঁর আগে ‘উইনার্স’-এর শক্তি বাড়াতেই নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত বলে পুলিশের দাবি।