স্নেহাশিস রায়। —নিজস্ব চিত্র।
দুই তরফের ব্যক্তিগত শত্রুতা। আর তার জেরেই খুন দমকলকর্মী।
ফ্ল্যাটের নীচে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুষ্কৃতীদের গুলিতে বৃহস্পতিবার খুন হয়েছিলেন দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার অজয়নগর খালপাড়ের বাসিন্দা স্নেহাশিস রায়। নিউ টাউন দমকল কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন তিনি। স্নেহাশিসকে খুন করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতেই দুই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করেছে লেক টাউন থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম আয়ুষ শর্মা ও আফরোজ আনসারি। শুক্রবার বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ের শত্রুতার শিকার হয়েছেন স্নেহাশিস। কমিশনারেটের দাবি, গত এক বছর ধরে সেই শত্রুতা ছিল বলে ভাড়াটে খুনিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার স্নেহাশিস খুন হওয়ার পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও অন্যান্য সূত্র মারফত খবর পেয়ে রহড়া এবং টিটাগড় থেকে আয়ুষ আর আফরোজ নামে দুই ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করা হয়। বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা এ দিন জানান, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে যে, স্নেহাশিসকে খুনের ছক কষেছিল দু’জন। তাদের মধ্যে এক জন খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে হাজির ছিল। নগরপাল বলেন, ‘‘একেবারে ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই স্নেহাশিস খুন হয়েছেন বলে ধৃতেরা স্বীকার করেছে। কারা খুনিদের ভাড়া করেছিল, তা-ও জানা গিয়েছে। কিন্তু কী কারণে শত্রুতা, সে সম্বন্ধে বিশদ তথ্য হাতে না পাওয়া অবধি এ নিয়ে কিছু বলছি না। গত বছর যখন স্নেহাশিসকে গুলি করার চেষ্টা হয়, সেই ঘটনার কিছু তথ্যও ধৃতদের থেকে পাওয়া গিয়েছে। আশা করছি, দ্রুত মূল অভিযুক্তদের ধরা যাবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোরাবাজার দমকল কেন্দ্রে কর্মরত অবস্থায় একটি বচসাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২১ জুন সকালে ওই দমকল কেন্দ্রের কাছেই স্নেহাশিসকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি চালায় এক ব্যক্তি। কোনও ভাবে সেই সময়ে রক্ষা পান ওই দমকলকর্মী। সেই সময়ে দমদম থানা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের দাবি, অকেজো সিসি ক্যামেরা আর পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ না থাকায় কাউকে ওই মামলায় গ্রেফতার করা যায়নি। এক বছর কেটে যাওয়ার পরে সেই একই ভাবে খুন হতে হল স্নেহাশিসকে।
পুলিশি সূত্রের খবর, স্নেহাশিস দমকল বিভাগে কাজে যোগদানের আগে ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসার সূত্রেই তিনি কারও শত্রুতার মুখে পড়েছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ দিন স্নেহাশিসের পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওই ব্যবসা থেকেই স্নেহাশিসের ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যে কারণে তিনি শত্রুতার শিকার হলেন। তবে সম্পূর্ণ তথ্য হাতে না পেয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় পুলিশও।
এ দিন অভিযুক্তদের বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলে লেক টাউন থানার পুলিশ। ধৃতদের টিআই প্যারেড করাতে আদালতের অনুমতি চাইলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। যদিও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, অস্ত্র আইনে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।