ঘটনাস্থলে পুলিশবাহিনী
সল্টলেকের এজে ব্লকের একটি বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কঙ্কাল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘটনায় অপহরণ এবং খুনের মামলা রুজু করে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই বাড়ির মালকিন ও তাঁর ছোট ছেলেকে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেও ঘটনার রহস্য তো কাটলই না, বরং তা আরও ঘনীভূত হল। সূত্রের খবর, কী ভাবে খুন, খুনের কারণ কী— তা এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধৃত বাড়ির মালকিন গীতা মহেনসরিয়া এবং তাঁর ছোট ছেলে বিদুর মহেনসরিয়াকে শুক্রবার বিধাননগর আদালতে তোলা হয়েছিল। সরকারি আইনজীবী সাবির আলি অভিযুক্তদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত দেওয়ার আর্জি জানান। অভিযুক্তদের আইনজীবী জাকির হোসেন জানান, তাঁর মক্কেলদের মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাঁদের চিকিৎসারও দরকার। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক অভিযুক্তদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন।
উল্লেখ্য, এজে-২২৬ নম্বর বাড়ির গৃহকর্তা অনিলকুমার মহেনসরিয়া বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। তাতে অনিল জানান, তাঁর স্ত্রী গীতা কাউকে দিয়ে তাঁদের বড় ছেলে অর্জুনকে অপহরণ করে খুন করিয়েছেন বলে তাঁর সন্দেহ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ওই কঙ্কাল উদ্ধার করে। একটি তোয়ালে দিয়ে সেটি মোড়া ছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি শিলনোড়া মিলেছে। সেটি দিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। পাশাপাশি পোড়ার চিহ্ন এবং রক্তের নমুনা দেখে আরও অনুমান, দেহটি বাড়ির ভিতরে পোড়ানো হয়েছিল। পরে ছাদে রেখে আসা হয়।
একই সঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঠাকুরঘরের কাছের অবস্থা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখে পুলিশের অনুমান, একটি কড়াই জাতীয় পাত্রে কর্পূর এবং ঘি জ্বালানো হয়েছিল। তারা মনে করছে, মানুষ পোড়ানোর গন্ধ ঢাকতে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি খুন করার পরে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল? যদিও স্থানীয় সূত্রে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই বাড়ি থেকে কখনও আগুন বা ধোঁয়া দেখা যায়নি। শোনা যায়নি কোনও আর্তনাদও।
তবে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং কঙ্কালটি দেখে পুলিশের অনুমান, সেটি নিখোঁজ অর্জুনের। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, অনিল এবং গীতার মধ্যে মাঝেমধ্যেই অশান্তি লেগে থাকত। যা নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছিল। ঘটনার নেপথ্যে সেই অশান্তিকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই দম্পতির ছোট ছেলে বিদুর ও মেয়ে বৈদেহীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, প্রয়োজনে বৈদেহীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর সঙ্গে এই ঘটনার পিছনে কোনও আর্থিক বা সম্পত্তিগত কারণ রয়েছে কি না, সেই দিকটিও দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজে জড়িত ছিলেন অর্জুন। তাঁর নানা শারীরিক সমস্যাও ছিল। সেই কারণে কোনও অশান্তি দানা বেঁধেছিল কি না, দেখা হচ্ছে তদন্তে। পুলিশের আর একটি সূত্রের অনুমান, ঘটনার নেপথ্যে তন্ত্রসাধনার যোগও থাকতে পারে। কারণ স্থানীয় ভাবে জানা গিয়েছে, ওই বাড়িতে পুজো হত নিয়মিত। তা বাইরে থেকে টের পাওয়া যেত। যদিও এই দিকটি নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে চায়নি পুলিশ।
এক পুলিশকর্তা জানান, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক, ময়না-তদন্ত এবং অন্যান্য পরীক্ষার পরেই পুরো বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।