প্রতীকী ছবি।
বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থেকে নামানো হচ্ছিল চাদরে মোড়া একটি মৃতদেহ। দৃশ্যটি দেখেই সন্দেহ হয় এলাকার বাসিন্দাদের। ঠাকুরপুকুর থানায় খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে জানতে পারে, দুর্ঘটনায় মৃত ভাই কৃষ্ণ ঘোষালের (২২) মৃতদেহ মা সরস্বতী ঘোষালকে দেখানোর জন্যই ট্যাক্সিতে সেটি ওই ভাবে চাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন দাদা নারায়ণ ঘোষাল। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে ঠাকুরপুকুর থানার বাঁকড়াহাট রোডের পঞ্চানন মন্দির এলাকায়।
তবে এ দিনের এই ঘটনাকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। ভাই কৃষ্ণের দেহটি কী ভাবে গোপনে চাদরে মুড়ে নারায়ণ নিয়ে এলেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। পুলিশকেই বা কেন তিনি কিছু জানালেন না, তারও উত্তর মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, নারায়ণ তাঁর ভাই কৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে যা বলছেন, তা কতটা সত্যি? নারায়ণ এবং ওই ট্যাক্সির চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, নারায়ণ জেরায় জানিয়েছেন, গত বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ময়দান এলাকায় তাঁর ভাই কৃষ্ণ পথ দুর্ঘটনায় পড়েন। তাঁকে পথচারীরাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে (কোন হাসপাতাল, তা জানা যায়নি) নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে ময়দান এলাকার একটি ফুটপাতেই সেই রাতটা কাটিয়ে দেন কৃষ্ণ। পরের দিন বাড়ি না ফিরে তিনি লিন্ডসে স্ট্রিটের ফুটপাতে চলে আসেন। সেই ফুটপাতেই নারায়ণের খেলনার স্টল রয়েছে। নারায়ণের দাবি, সেই রাতে তিনিও সেখানেই ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে উঠে দেখেন, ভাই কোনও সাড়াশব্দ করছেন না। অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। নারায়ণের ধারণা হয়, ভাই বেঁচে নেই। তখন তিনি তাঁর মাকে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানান। মা ভাইকে নিয়ে বাড়ি যেতে বলেন নারায়ণকে। নারায়ণ তখন ভাইয়ের দেহটি চাদরে মুড়ে একটি ট্যাক্সিতে চাপিয়ে বাঁকড়াহাটে নিয়ে আসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নারায়ণের গোটা বক্তব্যে বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে। কিছু একটা লুকনোর চেষ্টা করছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, কৃষ্ণকে যখন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল, তখন তিনি বাড়িতে না ফিরে ময়দানের ফুটপাতে থেকে গেলেন কেন? সেই রাতে নারায়ণই বা ভাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন না কেন? কৃষ্ণ তো সুস্থই ছিলেন। তা হলে বৃহস্পতিবার রাতে কী এমন ঘটল যে, শুক্রবার সকালে তিনি মারা গেলেন? ভাইয়ের সঙ্গে থেকেও কিছুই কি টের পাননি নারায়ণ? এ দিন সকালে নারায়ণ যখন দেখলেন, ভাই মারা গিয়েছেন, তখন পুলিশকে খবর না দিয়ে ট্যাক্সিতে চাদরে মুড়ে ভাইয়ের দেহটি বাড়িতে আনতে গেলেন কেন?
পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ জানতে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ময়দান এলাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর একটি দুর্ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। ওই দুর্ঘটনায় যে যুবক আহত হন, তাঁর ছবির সঙ্গে কৃষ্ণের মিল পাওয়া গিয়েছে।