তীব্র দহনে গঙ্গার জলতল প্রায় তিন ফুট নেমে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর-প্রশাসনের।
এই অবস্থায় গঙ্গা থেকে প্রয়োজনীয় জল তোলার ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি জল অতিরিক্ত লবণাক্তও হয়ে পড়ে। এ বছর গরমের শুরুতেই এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সমস্যা মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।
এরই মধ্যে বুধবার পুর-অধিবেশনে তাঁর ওয়ার্ডের কয়েকটি স্থানে তীব্র জলসঙ্কটের অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রত্না রায়মজুমদার। তিনি জানান, বেহালায় ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুচিপাড়া, ষোলোফুট, বারোফুট, কালীপুর, বেণীমাধব লেন, সরকার পাড়া এবং মহেশতলার কিছু জায়গা যা কলকাতা পুরসভার মধ্যে, সেখানে জলসঙ্কট ছিলই। এ বার তীব্র গরমে চরম অসুবিধায় পড়েছেন স্থানীয়েরা। বিষয়টি আলাদা ভাবে জানানো হয়েছে মেয়রকেও। মেয়র জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের জলের চাহিদা বেড়েছে। তাই কোথাও কোথাও জলের সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, জলস্তরও কমছে। তবে কলকাতা শহরে যা জল উৎপাদন হয়, তাতে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই জানান তিনি।
একই সঙ্গে জলের জোগান যাতে না কমে সে দিকেও নজর দিচ্ছে পুর প্রশাসন। জল সরবরাহ দফতরের ডিজি বিভাস মাইতি বলেন, ‘‘গঙ্গা থেকে জল তোলার ক্ষেত্রে যাতে ঘাটতি না হয়, তাই গার্ডেনরিচ ও পলতা জলপ্রকল্পে আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে জলে লবণের পরিমাণও। এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। তবে এটা ঠিক, ক্রমাগত জলতল কমতে থাকলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ বার গঙ্গার জলতল প্রায় তিন ফুট মতো কমে গিয়েছে। অন্য বার এত বেশি হয় না।’’
বিভাসবাবু জানান, সম্প্রতি পুরসভা পলতা এবং গার্ডেনরিচ থেকে গঙ্গার জলের যে নমুনা পরীক্ষা করেছে, তাতে প্রতি লিটারে লবণের পরিমাণ ২৬ মিলিগ্রাম। সহনশীলতার মাত্রা অনুযায়ী প্রতি লিটারে লবণের পরিমাণ ২৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। বিভাসবাবুর দাবি, সে দিক থেকে বিচার করলে কলকাতা পুরসভা অনেক বেশি নিরাপদে আছে।
পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, এই মুহূর্তে পলতা জলপ্রকল্প থেকে রোজ প্রায় ২০ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা হয়। অন্য দিকে, গার্ডেনরিচ থেকে সরবরাহ করা পানীয় জলের পরিমাণ দৈনিক ১৫ কোটি গ্যালন। ধাপা জলপ্রকল্প থেকেও প্রতিদিন ২ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা হচ্ছে। পুরসভার দাবি, এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভা এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন ২৮টি। সেখানকার সব ক’টি পাম্পই সচল রয়েছে। যেখানে এখনও গভীর নলকূপ রয়েছে, সেগুলির উপরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে।