প্রতীকী ছবি।
একটি বেআইনি নির্মাণের মামলায় পুলিশের পেশ করা চার্জশিট দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন বিচারক। তার পরে সামনে দাঁড়ানো অভিযুক্তকে দেখে তাঁর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! অভিযুক্ত হিসেবে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি প্রোমোটার নন, যে জমিতে অবৈধ নির্মাণ হচ্ছিল সেটির মালিক। তা হলে প্রোমোটার কোথায়? দেখা গেল, চার্জশিটে তাঁর নামই নেই! এর পরেই কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন কলকাতা পুর আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপকুমার অধিকারী। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি)-কে নারকেলডাঙা থানার ওসি এবং ওই মামলার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এই ধরনের তদন্তে গাফিলতির কারণও দর্শাতে বলেছেন বিচারক। বস্তুত, বেআইনি নির্মাণের তদন্তে গাফিলতি নিয়ে ২০১৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ ছিল। পুর আদালতের রায়ে সে কথারও উল্লেখ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রতিটি থানায় হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি পাঠিয়ে তাদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। পুলিশের একাংশের সঙ্গে প্রোমোটারদের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও মাঝেমধ্যে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না, তা ডেপুটি কমিশনারকে খতিয়ে দেখতে বলেছে পুর আদালত। পাশাপাশি, নতুন করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন বিচারক।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল নারকেলডাঙা থানায়। তার সাত দিন পরে মামলা রুজু হয়। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ হলেও চার্জশিট জমা পড়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ার দু’বছর পরে, চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর। যে পুর আধিকারিক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাঁর কোনও বয়ান নথিভুক্ত করা হয়নি। এমনকি তাঁকে এফআইআর এবং চার্জশিটের প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি। জমির মালিককে অভিযুক্ত হিসেবে দেখালেও তিনি নির্মাণে কী ভাবে যুক্ত, তার কোনও তথ্য নেই। ওই অবৈধ নির্মাণের ফলে শুধু জনজীবন বিপর্যস্ত নয়, নিকাশি, পানীয় জল এবং রাস্তা অবরুদ্ধ হতে পারে বলে অভিযোগ করা হলেও নিয়মমাফিক পুরসভার আধিকারিক, দমকল বা কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ— কারও বয়ান জানতে চাননি তদন্তকারীরা। নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে কি না, প্রোমোটার কে, সে সবেরও উল্লেখ নেই। এমনকি যিনি অভিযুক্ত, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি! এ সব দেখে বিচারক মন্তব্য করেছেন, তদন্তের নামে প্রহসন হয়েছে। যে সহকারী কমিশনার চার্জশিট খতিয়ে দেখেছেন, তিনিও দায় এড়াতে পারেন না।
পুলিশ ও পুরসভা সূত্রের খবর, আমহার্স্ট স্ট্রিট, নারকেলডাঙা ও বন্দর অঞ্চলের বিভিন্ন থানা এলাকায় এমন বেআইনি নির্মাণের রমরমা চলছে। সম্প্রতি আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় এ নিয়ে গোলমালও হয়েছে। নারকেলডাঙা থানা এলাকায় এক বৃদ্ধ দম্পতির উপরে নির্মাণ-ব্যবসায়ীদের অত্যাচার নিয়ে থানায় জানানো হলেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। পুরসভার এক কর্তা বলেন, “পুর আদালত বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে নাগরিকেরা সরাসরি আদালতে এসেও অভিযোগ জানাতে পারবেন।”