প্রতীকী ছবি।
অতিমারির আতঙ্ক তাঁদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। গত বছর থেকেই তাঁরা পাহাড়ি পথের অভিযাত্রী। এ বছরও শৃঙ্গের টানে নেপাল থেকে হিমাচল— দেশে-বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বঙ্গের পর্বতারোহীরা।
সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৪৮ মিটার) অভিযানে এ মাসেই নেপালে যাচ্ছেন চন্দননগরের তরুণী, প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা পিয়ালী বসাক। লক্ষ্য, অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্ট ও তার ‘সিস্টার পিক’ লোৎসে (৮৫১৬ মিটার) আরোহণ। পিয়ালী বলছেন, ‘‘২০১৯ সালে এভারেস্টে গিয়েও অল্প দূর থেকে ফিরে আসতে হয়। তাই পথ অনেকটাই চেনা।’’
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৫০০০ জন এভারেস্টজয়ীর মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া সফল পর্বতারোহীর সংখ্যা দুশোরও কম। ১৯৭৮ সালে প্রথম এই অসাধ্য-সাধন করেন পর্বতারোহী রাইনহোল্ড মেসনার। সিলিন্ডার ছাড়া ১০ বার এভারেস্টে উঠেছেন নেপালের শেরপা আং রিটা। লক্ষ্যপূরণ হলে পিয়ালীই হবেন অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া এভারেস্টের শীর্ষ ছোঁয়া প্রথম ভারতীয়।
তবে এখনই অতশত ভাবছেন না তরুণী। বলছেন, ‘‘২০২১ সালে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া ধৌলাগিরির মতো শক্ত শৃঙ্গের সামিটে পৌঁছেছি। পাহাড়ের অধিক উচ্চতাতেও আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন বেশি থাকে, যা আমার ক্ষেত্রে প্লাস পয়েন্ট। তবে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সিলিন্ডার সঙ্গে রাখব। বাড়িতেও বুঝিয়েছি যে, তেমন চিন্তার কিছু নেই।’’
আর এভারেস্টের কুখ্যাত ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’? পিয়ালী বলছেন, ‘‘ওখানে গিয়ে অভিজ্ঞ শেরপাদের সঙ্গে আলোচনা করব। যে দিন ভিড় কম থাকবে, সে দিন সামিটের চেষ্টা করব।’’ আপাতত অভিযানের বিপুল খরচ (৩৫ লক্ষ টাকা) জোগাড়ে দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি। শুভানুধ্যায়ীরা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থাও করেছেন।
এভারেস্টজয়ী প্রথম অসামরিক বাঙালি দেবাশিস বিশ্বাসের ঝুলিতে রয়েছে নেপালের সাতটি আট হাজারির শীর্ষ ছোঁয়ার কৃতিত্ব। এ বার তাঁর নজরে নেপালের পুমোরি (৭১৬১ মিটার), নুপৎসে (৭৮৬১ মিটার) বরুণৎসে (৭১৬২ মিটার), নিরেখা-সহ (৬০৬৯ মিটার) বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ। সময় লাগবে প্রায় ৪০ দিন।
গত বছর আমা দাবলাম-সহ নেপালের বেশ কিছু টেকনিক্যাল শৃঙ্গ অভিযানে গিয়েছিলেন দেবাশিস। তবে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অভিযানের মাঝপথেই ফিরে আসেন তিনি। বাকি থেকে গিয়েছিল পুমোরি (তিব্বতী ভাষায় অর্থ, সুন্দরী মেয়ে)। এ বার সে-ই পাখির চোখ দেবাশিসের। এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’জন ভারতীয়
এই শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন। দেবাশিসের কথায়, ‘‘বেস ক্যাম্পের বাঁ দিক থেকে সরাসরি পুমোরি
শৃঙ্গ দেখা যায়। উচ্চতা তুলনায় কম হলেও টেকনিক্যাল দিক থেকে অনেকটাই শক্ত। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যে ভয়াবহ তুষারধস নেমেছিল, তা এসেছিল এই পুমোরি থেকেই।’’ আয়কর দফতরের কাজের চাপ সামলে ৫-৬ এপ্রিল নেপাল রওনা হওয়ার কথা তাঁর। বলছেন, ‘‘এত দিনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, সামিট করাটাই সাফল্যের একমাত্র
চাবিকাঠি নয়। সুস্থ ভাবে ফিরে আসাটাই আসল পরীক্ষা।’’
এই মরসুমে বঙ্গের পর্বতারোহীদের নজরে রয়েছে হিমাচলও। মে মাসে হিমাচলের ইন্দ্রাসন শৃঙ্গ (৬২২১ মিটার) ও দেও টিব্বা (৬০০১ মিটার) অভিযানে যাচ্ছেন এভারেস্টজয়ী রুদ্রপ্রসাদ হালদার এবং সপ্তশৃঙ্গজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। সঙ্গে সোনারপুরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের জনা দশেক সদস্যও। রুদ্রপ্রসাদ বলছেন, ‘‘টেকনিক্যাল দিক থেকে ইন্দ্রাসন অনেকটাই কঠিন। রক ক্লাইম্বিং করতে হবে অনেকটা। খাড়াই পাথরে ২০ ফুট ট্রাভার্স করতে হবে, ঝুলে ঝুলে জ়ুমার করে ৩০ ফুটের ওভারহ্যাংয়ের মাথায় চড়তে হবে। এই পথে পাথর বেশি পড়ে।’’ আর সত্যরূপ বলছেন, ‘‘ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে আরও এক বার সুমেরু অভিযান স্থগিত করেছে আয়োজনকারী সংস্থা। তাই রক ক্লাইম্বিং আর হিমালয়েই মন দিয়েছি।’’