পাহাড় নিয়ে আড্ডায় হোমের শিশুরা, সঙ্গী সত্যরূপ 

পাহাড়ের গল্প শোনানোর ফাঁকে তাদের সব সরল প্রশ্নের সহজ উত্তর গেলেন সদ্য আন্টার্কটিকা থেকে শহরে ফেরা সত্যরূপ।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

মুখোমুখি: সত্যরূপ সিদ্ধান্তকে কার্ড উপহার খুদেদের। নিজস্ব চিত্র

‘‘তাঁবুর পাশে রাখা বেলচাগুলোর তো অনেক ওজন! পাহাড়ের মাথায় ব্যাগে করে নিয়ে গেলে কী করে?’’

Advertisement

উত্তর আমেরিকার দেনালি পাহাড়ে তাঁবুর ছবি দেখে প্রশ্নটা করেই ফেলল এক খুদে। পাহাড়ে রামধনু দেখার গল্প শুনে আর এক খুদের আবার আবদার, ‘‘তোমার পাহাড় আঁকার খাতাটা দেখব।’’ সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরির জোড়া-খেতাব জয় করে বিশ্বরেকর্ড করা সত্যরূপ সিদ্ধান্তকে হাতের সামনে পেয়ে এমনই সব প্রশ্ন-আবদারে ভরিয়ে দিল কচিকাঁচারা। আর পাহাড়ের গল্প শোনানোর ফাঁকে তাদের সব সরল প্রশ্নের সহজ উত্তর গেলেন সদ্য আন্টার্কটিকা থেকে শহরে ফেরা সত্যরূপ।

সোমবার, শহরের একাধিক সরকারি-বেসরকারি হোমে থাকা শিশু এবং মাদ্রাসার পড়ুয়াদের সঙ্গে সত্যরূপের মুখোমুখি দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিল রাজ্য শিশু অধিকাররক্ষা কমিশন। ওই খুদেদের কেউ তৃতীয় শ্রেণি, কেউ ষষ্ঠ শ্রেণি। ৪০-৫০ জন খুদের সামনে পর্বতারোহণের রকমারি গল্পের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিশ্বজয়ী এই পর্বতারোহী। কখনও এভারেস্ট জয়ের কাহিনি শুনিয়েছেন, কখনও কথার ছলে পাহাড়ে গিয়ে আবর্জনা ফেলে না আসার শিক্ষা দিয়েছেন। ‘ভয়েসেস অব দ্য মাউন্টেনস’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে পাহাড়ি গল্পে মন্ত্রমুগ্ধ খুদেরা এক সময়ে নিজেরাই বলে উঠেছে, ‘পাহাড় যেতে হলে আমাদের পড়তে হবে, জানতে হবে, কষ্ট করতে হবে’।

Advertisement

পাহাড়কে ছুঁয়ে দেখা এখনও স্বপ্ন ট্যাংরার একটি হোমের আবাসিক এবং বাস্তুহারা বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া দেবাশিস-নন্দিনী-দীপ-রোহিতদের। পাহাড়ের সঙ্গে পরিচয় শুধু বইয়ের পাতা আর টিভির পর্দাতেই। কিন্তু এ নিয়ে আগ্রহ তাদের কিছু কম নয়। প্রথম এভারেস্টজয়ীদের নাম থেকে শুরু করে আন্টার্কটিকায় দিন-রাতের হিসেব কেমন— সত্যরূপের প্রশ্নে লাফিয়ে উঠে উত্তর দিয়েছে পুরব-নন্দিনীরা। আফ্রিকার ‘চাঁদের পাহাড়’ কিলিমাঞ্জারো অথবা এভারেস্টের পথে বিপজ্জনক খুম্বু আইসফলের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছে কেউ কেউ। অনেকে আবার রোমাঞ্চিত পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মাথায় তোলা ভিডিয়ো দেখে। স্লাইড শোয়ের ফাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করতেও ছাড়েনি তারা। মাদ্রাসার পড়ুয়া একটি মেয়ের সপ্রতিভ প্রশ্ন, ‘‘এই ভিডিয়োগুলো কে তুলেছে?’’ লাজুক গলায় আর এক জন জানতে চায়, ‘‘চুড়ো থেকে নামার সময়ে কেমন লাগে?’’

শুধু প্রশ্নবাণই নয়, সত্যরূপের জন্য খুদেরা এনেছিল হাতে আঁকা কার্ডও। তার কোনওটায় আগ্নেয়গিরি, কোনওটায় পাহাড়ের গায়ে সূর্যোদয়ের ছবি আঁকা। উপহার পেয়ে খুশি বিশ্বজয়ী সত্যরূপ বলছেন, ‘‘ওদের কাছে পাহাড়ের কথা বলে যদি ওদের সামনে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারি, তা-ই বা কম কী! এর পরে হয়তো ওরা নিজেদের মতো করে পাহাড়কে চিনে নেবে।’’ আর কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘হাঁপানি জয় করে যে ভাবে সত্যরূপ এই বিশ্বরেকর্ড করলেন, তা সকলের কাছেই শিক্ষণীয়। হোমে থাকা এই শিশুদের ওঁর জীবনের গল্পটা জানা উচিত বলে মনে হয়েছিল। তাই এই উদ্যোগ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement