স্বামীর সঙ্গে রাত দশটা নাগাদ স্থানীয় একটি বাজারে কেনাকাটি করতে বেরিয়েছিলেন রিজেন্ট প্লেসের বাসিন্দা লীলা বসু। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় জখম হন স্বামী তুষারকান্তি বসু। মাস খানেকেরও বেশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
শুধু একটি ঘটনা নয়, রাণিকুঠি, নেতাজিনগর, পল্লিশ্রী, শ্রীকলোনি, বিজয়গড়, গল্ফগ্রিন এলাকায় এমন বেপরোয়া মোটরসাইকেলের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর থেকে এই সব এলাকার রাস্তাগুলি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বেপরোয়া মোটরসাইকেলের দাপটে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে পথচারীদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের কোনও টহলদারি এই সব এলাকায় থাকে না। সন্ধ্যার পরে এই সব এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোজ নামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেলে তিন-চার জন করে সওয়ার থাকেন। এঁদের মাথায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও হেলমেট থাকে না। গাড়ির গতিও বেশি থাকে। সামনে কোনও পথচারী পড়লেই দুর্ঘটনা ঘটে।
বাসিন্দা অলকেশ চক্রবর্তী বলেন, “অনেক সময় বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকরা নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীকেও ধাক্কা মারেন। এমনকী বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে চালক ও সওয়ারি জখম হয়েছেন অনেক বার। দোকানের মধ্যেও গাড়ি ঢুকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক বার।” ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত জানান, “বাসিন্দাদের অনেকে আমার কাছেও এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছি।”
অভিযোগ, দুর্ঘটনা ঘটার পরে পুলিশি নজরদারি কয়েক দিনের জন্য বাড়নো হলেও পরে আবার যে-কে-সেই অবস্থা। ফলে ফের এই সব এলাকার রাস্তায় রাতে হেলমেটহীন মোটরসাইকেলে চালকদের দাপট শুরু হয়ে যায়।
সূত্রের খবর, কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী রাত ১২টার পরে শহরে ‘ট্র্যাফিক আওয়ার’ শেষ হয়। সংযোজিত এলাকায় ‘ট্র্যাফিক আওয়ার’ শেষ হয় রাত ১১টা নাগাদ। শুক্র, শনি, রবি শহরের কিছু ব্যস্ত এলাকায় রাত একটা পর্যন্ত ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীরা কর্তব্যরত থাকেন। এর পরে শহরের পথের দায়িত্ব যায় পুলিশের হাতে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাতের শহরের পথে বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে প্রায় প্রতি দিনই দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় হেলমেটহীন বাইকের সমস্যা নিয়েও তাঁরা জেরবার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সব মোটরসাইকেল আরোহীদের অধিকাংশই অল্পবয়সী। অধিকাংশই স্থানীয় ছেলে। এলাকায় পুলিশের গতিবিধি সর্ম্পকেও এঁরা ভালোরকম ওয়াকিবহাল। কখন কোথায় পুলিশ টহল দিচ্ছে, কোন রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে সবই এঁদের জানা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এঁরা সাধারণত পুলিশকে এড়িয়ে এক এলাকা থেকে আর এক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় তিন চারটে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও করে। যার ফলেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। ডিসি ট্রাফিক ভি সলোমন নিশাকুমার বলেন, “বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে সব সময় আমাদের নজরদারি থাকে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”