প্রতীকী ছবি।
পাত্র ছিল তাঁর ‘অপছন্দ’। সেই পাত্রের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করাতে নিজের মেয়েকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধেই। ঘটনাটি যাদবপুর থানা এলাকার বাঘা যতীন পল্লির। প্রেমিকাকে পেতে এখন থানায় থানায় দৌড়ে বেড়াচ্ছেন ওই যুবক। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তরুণীকে জোর করে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়েছেন নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোকজন। তাঁকে কারও সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশও কোনও পদক্ষেপ করছে না।
রঞ্জন নাথ নামে বছর ৩৯-এর ওই যুবক জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে জাতীয় গ্রন্থাগারে বছর ২৯-এর ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ক্রমে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রঞ্জনের দাবি, ‘‘নানা কারণে আমার প্রেমিকার সঙ্গে ওঁর মা জবাদেবীর অশান্তি লেগে থাকত। এক বার পাড়ার এক যুবক ওই তরুণীর সঙ্গে অভব্যতা করেন। আমরা থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু জবাদেবী বিষয়টি অন্য ভাবে মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমরা দু’জনে যা রোজগার করছি, তাতে ভাল ভাবে চলে যাবে ভেবে নিউ টাউনে ফ্ল্যাট নিয়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করি। সেখান থেকেই পুজোর আগে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিল ও। তার পরেই এমন ঘটনা।’’
পুলিশের কাছে অভিযোগে রঞ্জন জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর নিজের বাড়িতে ফিরেছিলেন ওই তরুণী। ৯ তারিখ তিনি রঞ্জনের সঙ্গে দেখা করতে বেরোন। রাতে বাড়ি ফিরে রঞ্জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। ওই যুবকের বয়ান অনুযায়ী, রাত প্রায় ১টা নাগাদ তরুণী ফোনে জানান, কেউ কলিং বেল বাজাচ্ছেন। তাই তিনি ফোন ছেড়ে দরজা খুলতে যাচ্ছেন। তার পর থেকেই তরুণীর খোঁজ নেই। রঞ্জন বলেন, ‘‘যত বার ওকে ফোন করেছি, ফোন বন্ধ পেয়েছি। ওর বাড়িতে যেতে জবাদেবী বলেন, মেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে বুঝতে পারি, উনি মিথ্যা বলছেন। শেষে জানতে পারি, ওকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’’ রঞ্জনের দাবি, ‘‘যে মেয়ে চা ছাড়া অন্য কোনও নেশা করে না, তাকে কেন আমার থেকে আলাদা করতে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হল, সেই উত্তর পেতেই থানায় থানায় ঘুরছি। লালবাজারেও অভিযোগ করেছি।’’
রবিবার ফোনে জবাদেবী দাবি করেন, ‘‘ওই ছেলেটির সঙ্গে মিশে আমার মেয়ে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধরে মারে, বাড়িতে ভাঙচুর করে। কোনও নেশা করে না ঠিকই, কিন্তু মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। ওই কেন্দ্রে এককালীন ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মাসে মাসে হয়তো ১০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। তাতেই মেয়ে সুস্থ হবে।’’ কিন্তু মানসিক সমস্যা যদি থেকেও থাকে, তা হলেও কি নেশামুক্তি কেন্দ্রে কাউকে রাখা যায়? মহিলা উত্তর দিতে পারেননি।
ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল নরেন্দ্রপুরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের সঙ্গেও। সুবীর নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরে শুধু বলেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত আর মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের পৃথক ভাবেই রাখার চেষ্টা হয়। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ অতীতে এমন নেশামুক্তি কেন্দ্র নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চসায়রের একটি কেন্দ্রে বয়স্কদের সঙ্গে মানসিক সমস্যায় ভোগা এক তরুণীকে রাখা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এই অভিযোগও ওঠে, ওই তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তখন প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নেশামুক্তি কেন্দ্র বা বৃদ্ধাবাসে মানসিক সমস্যায় ভোগা কাউকে রাখা বেআইনি। তার পরেও এ জিনিস চলে কী করে? যাদবপুর এবং নরেন্দ্রপুর থানার কেউই মন্তব্য করতে চাননি। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরও এ বিষয়ে খোঁজখবর করার আশ্বাস দিয়েছে।