Bidhannagar

Bidhannagar: মশা থেকে মুক্তি দেবে কে, জানতে চায় বিধাননগর

বাম থেকে তৃণমূলের জমানায় আসার পরে বিধাননগর পুরসভার পরিকাঠামো কলেবরে যতটা বেড়েছে, মশার দাপট বেড়েছে তার বেশ কয়েক গুণ।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৫
Share:

স্লুইস গেট ব্রিজ এলাকায় খাল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

রসিকতা করে কেউ কেউ বলেন, এ অঞ্চলের নাম ‘মশানগর’।

Advertisement

বাম থেকে তৃণমূলের জমানায় আসার পরে বিধাননগর পুরসভার পরিকাঠামো কলেবরে যতটা বেড়েছে, মশার দাপট বেড়েছে তার বেশ কয়েক গুণ। বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা এই মশার দাপট এবং তা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট, তাঁরা নিজেরা কতটা সচেতন, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।

সব মিলিয়ে নব কলেবরের বিধাননগর পুরসভা প্রথম পাঁচ বছর পার করলেও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে তারা যে পুরোপুরি সফল হয়নি, বাসিন্দাদের অধিকাংশের তেমনটাই মত। পুরসভার আবার বক্তব্য, বাসিন্দারা সচেতন না হলে মশা দমন অভিযান কোনও দিনই সফল হবে না।

Advertisement

সাবেক বিধাননগর পুরসভার সময় থেকেই শোনা গিয়েছিল, সেখানে নাকি কলকাতা পুরসভার ধাঁচে ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আজও অবশ্য সেই পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখেনি। পুরকর্তাদের দাবি, পরিকাঠামোর নাকি বিপুল উন্নতি হয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, কিসের উন্নতি? পুরসভা তো নিজস্ব ল্যাবরেটরিই তৈরি করতে পারেনি। তাঁদের অভিযোগ, পরিকাঠামোর উন্নতি হোক বা না হোক, পরিষেবার মান একই রয়ে গিয়েছে।

পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, মাত্র পাঁচ বছরে দীর্ঘ কয়েক দশকের সমস্যা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, কয়েকটি এমন সমস্যাও রয়েছে, যেগুলি বর্তমানে বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। যেমন, বিধাননগর পুর এলাকার চার দিকে কেষ্টপুর, বাগজোলা-সহ একাধিক খাল রয়েছে। বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ খালই নাব্যতা হারিয়েছে। তাই প্রবাহহীন জলে জন্মাচ্ছে মশা। অধিকাংশ খালপাড়েই বসে রয়েছেন দখলদারেরা। অভিযোগ, নিয়মিত আবর্জনা ফেলে খালগুলির দূষণ ঘটাচ্ছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি বিধাননগরে এমন অনেক ফাঁকা জমি রয়েছে, যেখানে আবর্জনা ফেলেন এলাকার বাসিন্দারাই। পুরসভা সচেতন করতে প্রচার চালালেও কেউ তাতে আমল দেন না।

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য প্রণয় রায়ের কথায়, ‘‘মশা নিয়ন্ত্রণে বিধাননগর পুরসভা অনেক উন্নতি করেছে। ওয়ার্ড-ভিত্তিক আলাদা দল এবং কেন্দ্রীয় দল তৈরি করে নজরদারি ও মশার বিষ স্প্রে করার কাজ চলছে। কোথাও জল জমছে কি না জানতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি, পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ এবং সচেতনতার প্রচারেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অধীনস্থ এলাকাগুলি অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি। সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যত কোনও পরিকাঠামো নেই। আবার পরিকল্পিত সল্টলেকেরও অনেক রকম সমস্যা রয়েছে। যার সমাধান হয়নি। সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশের আবার বক্তব্য, ‘‘মশার চরিত্র বদলেছে। ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গির প্রকোপ প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে। পুরকর্মীরা কিছু এলাকায় চেষ্টা করলেও মশার বাড়বাড়ন্ত কমে না। ফলে শুধু পুরসভা নয়, সার্বিক ভাবে রাজ্য প্রশাসনকেই এ বিষয়ে সুসংহত পরিকল্পনা করতে হবে।’’ কেষ্টপুরের বাসিন্দা সমর মণ্ডলের কথায়, ‘‘খালের সংস্কার করে নাব্যতা না বাড়ালে সমস্যা মিটবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, মশার এত উৎপাত সত্ত্বেও বাসিন্দাদের একাংশ নিয়মিত ভাবে খালে আবর্জনা ফেলে চলেছেন। সেই সঙ্গে যত্রতত্র পড়ে থাকা থার্মোকল বা প্লাস্টিকের পাত্রেও জল জমে থাকে বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন নির্মাণস্থল ও মেট্রো প্রকল্পের বিভিন্ন অংশেও জমে থাকে জল। বাড়ির বিভিন্ন অংশেও অনেকে জল জমিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ।

সল্টলেকে গিয়ে দেখা গেল, স্লুইস গেটের কাছে খাল ঢাকা পড়েছে কচুরিপানায়। পাশেই পড়ে আছে আবর্জনার স্তূপ। এ এল ব্লকের একটি ফাঁকা জমি ঝোপ-জঙ্গলে ভরে রয়েছে। সেখানে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। দেখার কেউ নেই।

বিধাননগর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পুরসভা তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে যথাসম্ভব কাজ করছে। আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিনটি হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি কর্মী-সংখ্যা এবং পরিকাঠামো, সবই বেড়েছে। কলকাতার মতো ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরি করা না গেলেও কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বছরভর মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ এবং সচেতনতার প্রচার চালানো হয়। পুরসভার ভূমিকার কথা বাসিন্দারা ভাল ভাবেই জানেন।’’ এর পরে তিনি যোগ করেন, ‘‘প্রচুর নির্মাণকাজ হচ্ছে। মেট্রো প্রকল্পেরও কাজ চলছে। সেখানে জমা জলের সমস্যা রয়েছে। সেখানেও পুরসভা পর্যাপ্ত পদক্ষেপ করেছে। করোনাকালে কর্মীরা যে কাজ করেছেন, তার স্বীকৃতি হিসাবে করোনা মোকাবিলায় স্বর্ণ-স্বীকৃতি পেয়েছে পুরসভা।’’

কৃষ্ণা জানান, রাজ্য প্রশাসনের কাছে সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্য দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চিনার পার্ক থেকে শুরু করে রাজারহাট-গোপালপুরে জল জমার সমস্যা দূর করতে পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। খাল সংস্কারও করা হবে।

মুখ্য প্রশাসকের কথায়, ‘‘যেটুকু সময় পুরসভা পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি, তার মধ্যেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামোর উন্নতিতে হাত দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এই ধারাকে বজায় রাখতে পারলে সমস্যা আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement