Municipality

অন্য রোগ নিয়ন্ত্রণেও গতি আনতে আরও পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র   

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৬৮২ জন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩০
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, করোনা প্রতিরোধে মন দিতে গিয়ে গত প্রায় দু’বছর ধাক্কা খেয়েছে অন্য রোগের প্রতিরোধ কর্মসূচি।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক পুর এলাকা থেকে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ সংক্রান্ত যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত অন্য সব পুরসভার তুলনায় কলকাতায় সব চেয়ে বেশি হয়েছে ডেঙ্গি। একক ভাবে ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ বা ২০২১ সালে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও অন্য পুরসভাগুলির নিরিখে তা অনেক বেশি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে করোনার পাশাপাশি যাতে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধের কাজও যথাযথ ভাবে চালানো যায়, তার জন্য কলকাতা পুরসভা আরও ৫৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত দিন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৪৪। তার সঙ্গে ৫৯টি নতুন কেন্দ্র হলে সেই সংখ্যাটা হবে ২০৩।

Advertisement

পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের কথায়, ‘‘কলকাতায় ১৬টি ডেঙ্গি শনাক্তকরণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসা হয়। এখানকার ডেঙ্গি প্রতিরোধ পরিকাঠামো অন্য শহরের থেকে ভাল। কিন্তু কলকাতায় জনসংখ্যা যেমন অন্য পুরসভার চেয়ে বেশি, তেমনই ডেঙ্গির পরীক্ষা কেন্দ্র বেশি হওয়ায় পরীক্ষাও বেশি হয়। তাতেও বেশি রোগী মেলে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘তবে এ কথা ঠিক, গত দু’বছর করোনা মোকাবিলায় কাজ করতে গিয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরসভার দৃষ্টি কিছুটা সরে গিয়েছে। যে কর্মীরা মশার লার্ভা মারার কাজ করতেন, তাঁরা করোনার প্রতিষেধক দেওয়া-সহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন। ফলে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই এ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে অন্য রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজে গতি আনা হবে।’’ অতীনবাবু জানান, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সাহায্যে এই ৫৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কলকাতার মধ্যে জায়গাও চিহ্নিত হয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৬৮২ জন। ২০২০ এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২২১৩ এবং ২৩২৯ জন। রাজ্যের অন্য কোনও পুরসভায় এত ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি।

যদিও কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস এই পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতার সঙ্গে দিল্লি-মুম্বইয়ের তুলনা হতে পারে, কিন্তু শ্রীরামপুর, শিলিগুড়ি, মধ্যমগ্রামের মতো জায়গার পরিসংখ্যানের তুলনা চলে না। তা ছাড়া, ২০২০ সালের কোনও তথ্য ঠিক নয়। সবাই তখন কোভিড নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাই ডেঙ্গির সব তথ্য ভুল।’’
তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতায় ২০১৯-এর তুলনায় এখন ডেঙ্গি ৬০ শতাংশ কমেছে।’’

তবে সরকারি পরিসংখ্যানকে ডেঙ্গি দমনে নিজেদের সাফল্য হিসাবেই দেখছে রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থা (স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা সুডা)। কলকাতা পুরসভা বাদ দিয়ে বাকি পুরসভাগুলিতে রোগ মোকাবিলার দায়িত্ব তাদের উপরেই। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এমন বহু পুরসভায় ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ এবং ২০২১ সালে অর্ধেকেরও অর্ধেক হয়ে গিয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতার সঙ্গে তুলনা করলেও তা অনেক কম।

সুডা-র এক শীর্ষ কর্তা জানান, পুরসভাগুলির তিনটি স্তরে লাগাতার নজরদারি, নিয়মিত বৈঠক ও রিপোর্ট জমা করা, সেই রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ, মশার লার্ভা মারার ওষুধ কেনার পরিমাণ দেড় গুণ বাড়িয়ে দেওয়া, লার্ভা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থানগুলিতে অভিযান, বদ্ধ জলাশয়ে নৌকা চালানো প্রভৃতির মাধ্যমে ওই পুর এলাকাগুলিতে ডেঙ্গি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement