প্রয়াত মনমোহন সিংহকে শ্রদ্ধা জানাতে কংগ্রেস দফতরে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। —নিজস্ব চিত্র।
মনমোহন সিংহ তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের বাসভবনে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন কংগ্রেসে তৎকালীন দাপুটে নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের উদ্বোধন করা হয়েছিল সেদিন। সেই অ্যাম্বুল্যান্সে সুদীপকে পশে বসিয়ে এক পাক ঘুরেওছিলেন মনমোহন। এর অনেক পরে, মনমোহন যখন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন তৃণমূল নেতা সুদীপ। এই পর্বে তিনি কলকাতায় মনমোহনকে তাঁর ইচ্ছানুসারে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি। বাসভবনটি সংস্কারের পর।
আজ মনমোহনের শায়িত দেহ ঘিরে যখন কংগ্রেসের সদর দফতরে নেতা কর্মীদের শ্রদ্ধানিবেদন চলছে, পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরকে সেই স্মৃতিচারণ করলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পাঠিয়েছিলেন সুদীপ ও রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে। তাঁরা আজ দিল্লি পৌঁছে সরাসরি চলে যান কংগ্রেসের সদর দফতরে। সেখানে রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গের মতো নেতাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয় সুদীপের। রাহুলের সঙ্গে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন মলয়বাবুর। রাহুল মলয়বাবুকে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর শুভেচ্ছা জানাতে। এরপরই কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল তৃণমূল নেতাদের নিয়ে যান গুরশরণের কাছে।
সংসদের ভিতরে কক্ষ সমন্বয়ের প্রশ্নে এবং বাইরেও বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া-য় কংগ্রেসের 'ছড়ি ঘোরানোর' অভিযোগে তৃণমূলের 'অ্যালার্জি' স্পষ্ট। সদ্যসমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেসের কোনও ধর্না প্রতিবাদ আন্দোলনেই তৃণমূলকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ মনমোহন সিংহের শেষ বিদায়ের দিনে কংগ্রেসের সদর কার্যালয়ে কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের বাইরে একমাত্র তৃণমূলের ওই দুই নেতাই উপস্থিত থাকলেন। অন্য কোনও শরিক বা বিরোধী দলের কোনও নেতা সেখানে আসেননি আজ। তার কারণ, গতকাল হাসপাতাল থেকে মনমোহনের দেহ তাঁর বাসভবনে নিয়ে আসার পরই এসপি, ডিএমকে, তেলুগু দেশম, আরজেডি-সহ প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে তাঁদের শোক জানিয়ে গিয়েছিলেন। এসেছিলেন বিজেপিরও কিছু নেতা। আবার আজ নিগমবোধ ঘাটে শেষকৃত্যের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা সবাই উপস্থিত ছিলেন।