থমকে রবীন্দ্র সরোবরের জলের মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া।
লাল ফিতের গেরোয় আটকে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবরের মতো জাতীয় সরোবরের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সরোবর সংরক্ষণ প্রকল্প ছাড়া অন্য কোনও প্রকল্পে সরোবরের উন্নয়নের জন্য আবেদন করা যাবে না। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, ২০০২ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার ‘ন্যাশনাল লেক কনজ়ারভেশন প্ল্যান’-এ (জাতীয় সরোবর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প) রবীন্দ্র সরোবরের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তার মধ্যে জলাশয়ের জলের মানোন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা ছিল দু’কোটি টাকা। কিন্তু সে সময়ে জলের মান উন্নত করতে সেই টাকা ব্যবহার করা হয়নি। ফলে অব্যবহৃত সেই টাকা ফেরত চলে যায়। সরোবরের উন্নয়নের স্বার্থে অন্য খাতে ওই টাকা ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্য সরকার আবেদন করলেও তা নাকচ হয়ে যায়। তবে বাকি ৪ কোটি টাকা সরোবরের উন্নয়নের জন্য খরচ করা হয় বলে কেএমডিএ কর্তারা জানাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সে সময়েই বলা হয়েছিল, জাতীয় প্রকল্পের অর্থ যে খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে, তার বাইরে অন্য কোনও খাতে সেই টাকা খরচ করা যাবে না। ২০১৩ সালে ‘ন্যাশনাল লেক কনজ়ারভেশন প্ল্যান’ এবং ‘ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড কনজ়ারভেশন প্রোগ্রাম’ একসঙ্গে যুক্ত করা হলেও এই খাতে জাতীয় সরোবরের উন্নতিতে অর্থ বরাদ্দ করতে রাজি হয়নি কেন্দ্র।
প্রশ্ন উঠছে, রবীন্দ্র সরোবরের জলের মানোন্নয়নের জন্য কেন সে সময়ে কাজ করেনি কেএমডিএ। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সেই সময়ে সরোবরের জলের মান ঠিকঠাক ছিল বলেই সেই অর্থ খরচ করা হয়নি। তবে ওই অর্থ সরোবরের অন্য কাজে অনায়াসেই ব্যবহার করা যেতে পারত বলে অভিমত আধিকারিকদের একাংশের। ২০১১ সালে ‘জাতীয় সরোবর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পে’ সরোবরের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার জন্য কেএমডিএ-র তরফে আবেদন করা হয়েছিল। তা পাওয়া যায়নি।
তবে এই সমস্যার সমাধানে রবীন্দ্র সরোবরের সামগ্রিক উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় খরচ দেবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘সরোবরের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের থেকে অর্থ নেওয়া হবে না। রাজ্যই এই খরচ বহন করবে। কারণ বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের কাছে অর্থ চেয়েও পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এই খাতে কেন্দ্রের কোনও প্রকল্পই নেই।’’
রবীন্দ্র সরোবরের উন্নয়নের স্বার্থে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন খাতে চার দফায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। পঞ্চম দফায় সরোবরের রাস্তা, জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরির প্লান্ট এবং সরোবরের মধ্যে পার্ক তৈরির জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সে বিষয়ে নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
তবে এ নিয়ে পরিবেশকর্মীদের একাংশ সরব হয়েছেন। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরের মতো জাতীয় সরোবরে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্প থাকা প্রয়োজন।’’