টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে।
‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন এক ব্যক্তি। আর তাঁকে জোর করে, টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলছে কয়েক জন যুবক। ওই ব্যক্তিকে তোলার পরে সকলের সামনে দিয়েই চম্পট দিল সাদা রঙের গাড়িটি!
দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এমন ঘটনা দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন আশপাশের লোকজন। কী হল, বুঝতে না পারলেও বুদ্ধি করে তখনই চলন্ত গাড়ির ছবি তুলে নিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেই ছবি নিয়েই গাড়ির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে অপহরণের এই ঘটনাটি ঘটেছে বালিগঞ্জ থানার সানি পার্ক এলাকায়। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত আর কাকেই বা জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হল, তা এখনও জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। জানেন না প্রত্যক্ষদর্শীরাও।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সানি পার্কের দিক থেকে বেরিয়ে আসেন মাঝবয়সি এক ব্যক্তি। তাঁর পরনে ছিল হাফ হাতা জামা, ট্রাউজার্স ও জুতো। পিঠে ছিল একটি ব্যাগ। সানি পার্কের আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভিনিউয়ের মুখে একটি চায়ের দোকানে এসে ঢোকেন তিনি। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল তিন-চার জন যুবক। ওই ব্যক্তি আসার পরে সকলে মিলে চা-ও খাওয়া হয়।
চায়ের দোকানির কাছ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, আগে থেকে দাঁড়ানো যুবকদের সঙ্গে যে ভাবে ওই ব্যক্তি কথাবার্তা বলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সকলেই পূর্ব-পরিচিত। এর মধ্যেই সাদা রঙের বড় গাড়িটি এসে চায়ের দোকানের উল্টো দিকে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের উপরে দাঁড়ায়। তা দেখে চা খাওয়া শেষ করে ওই যুবকদের সঙ্গেই কথা বলতে বলতে মূল রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করেন ওই ব্যক্তি। চায়ের দোকানের পাশের পানের দোকানি সঞ্জয় চৌরাশিয়া বলেন, ‘‘ওরা কয়েক পা হেঁটে যাওয়ার পরেই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে দেখলাম, পিঠে ব্যাগ নেওয়া ব্যক্তি চেঁচাচ্ছেন। আর তাঁকে ধাক্কা মারছে বাকিরা।’’
সঞ্জয় আরও জানান, সেই সময়ে পথচলতি এক ব্যক্তি দৌড়ে বাঁচাতে গেলে ওই যুবকেরা তাঁকেও গাড়িতে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাতে পিছিয়ে আসেন তিনি। এর মধ্যে চেঁচামেচি শুনে আশপাশের দোকান ও শোরুমের লোকজনও বাইরে বেরিয়ে আসেন। ওই এলাকায় পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মী রাহুল ভুঁইয়া বলেন, ‘‘বাবা আর আমি দু’জনেই দৌড়ই। কিন্তু তত ক্ষণে পিঠে ব্যাগ নেওয়া ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গাড়িটা পার্ক সার্কাসের দিকে চলে যায়।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তিকে তুলে গাড়িটি পার্ক সার্কাসের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই স্থানীয় শোরুমের এক কর্মী মোবাইলে ছবি তুলে নেন। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাড়ির মাঝের দু’দিকের দরজা খোলা। নম্বর প্লেটও (ডব্লিউবি ২৪এইউ ৭৯০৯) স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওই ছবিতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বেপরোয়া গতিতে তা বেরিয়ে যায়। এর পরেই স্থানীয় লোকজন বালিগঞ্জ থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মোবাইলে তোলা ছবিটি সংগ্রহ করে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড ও থানা ছাড়াও আশপাশের জেলা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করেও ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে লালবাজার।