প্রতীকী ছবি।
প্রথমে বিশিষ্টদের ছবি, ভিডিয়ো দিয়ে তৈরি করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ফ্যান পেজ’। তার পর সেই পেজ থেকে অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের খোলামেলা ছবির দাবি করা এবং পরে সেই সব ছবি হাতিয়ার করে দিনের পর দিন হুমকি। অভিযোগ, এ ভাবেই ‘বড় নাম’ কাজের সুযোগ দিচ্ছেন ভেবে সেই ফাঁদে পা দিলেই হাজার হাজার টাকা খুইয়ে প্রতারিত হতে হয়।
তাঁর নাম ভাঁড়িয়ে ‘ফ্যান পেজ’ খুলে এমনই প্রতারণা-চক্র চলছে জানিয়ে সম্প্রতি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার এক নামী চলচ্চিত্র পরিচালক। ওই পরিচালকের দাবি, সেই সময়ে এক অভিযুক্তকে ধরার পাশাপাশি পেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও পুলিশ তাঁকে জানিয়েছিল। যদিও মঙ্গলবারই এক উঠতি অভিনেত্রী পুলিশে অভিযোগ করেছেন যে, সেই পেজের ফাঁদে পা দিয়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। যা শুনে ওই পরিচালক বললেন, “এর আগেও আমার নামে ওই রকম পেজ খুলে কারও থেকে তিন হাজার, কারও থেকে চার হাজার করে টাকা তুলেছিল। পুলিশ তো বলেছিল সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফের তা হলে এমনটা ঘটল কী করে!” অভিযোগকারিণীর দাবি, শুধু কলকাতার ওই পরিচালকই নন, মুম্বইয়ের এক বাঙালি পরিচালকের নাম ভাঁড়িয়েও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রতারণা-চক্রের পাণ্ডারা।
ভবানীপুরের বাসিন্দা ওই অভিনেত্রী এ দিন বলেন, “ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছি। তবে এখন কাজ পাওয়া কতটা শক্ত, সকলেই জানেন। ওই নামী পরিচালকের নামে তৈরি ‘ফ্যান পেজ’টা লাইক করেছিলাম। সেই পেজ থেকেই গত সোমবার নতুন অভিনেতা খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে একটি মেসেজ আসে। মেসেজের উত্তর দিলে একটি ফোন নম্বর পাঠানো হয়। মুম্বইয়ের এক নামী বাঙালি পরিচালকের নাম করে জানানো হয় যে, সেটি তাঁর নম্বর।”
এর পরে সেই নম্বর মোবাইলে সেভ করে সোমবার রাতেই হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন অভিযোগকারিণী। ব্যক্তিগত কিছু তথ্য জানার পাশাপাশি ওই নম্বর থেকে তাঁর খোলামেলা ছবিও চাওয়া হয় বলে তরুণীর দাবি। তাঁর কথায়, “আমাদের পেশায় রাত পর্যন্ত অনেকেই কাজ করেন ঠিকই। কিন্তু কাজ খুঁজছে, এ রকম কারও সঙ্গে ওই মাপের এক জন পরিচালক অত রাত পর্যন্ত কথা বলছেন দেখে প্রথমে সন্দেহ হয়। এর পরে রেজিস্ট্রেশন বাবদ টাকা চাওয়া হয়। তখনই মনে হল, অত নামী এক জন পরিচালক রেজিস্ট্রেশনের টাকা চাইতে পারেন না। এর পরে আমার যে ধরনের ছবি চাওয়া হল, তাতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল।’’ ওই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালেই কয়েক জন পরিচিত সিনিয়র অভিনেতার সঙ্গে কথা বলে পুলিশে জানাব ঠিক করি। সকালে ওই নম্বরে ফোন করে পুলিশে যাচ্ছি বলার পরেই আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়।” এর পরেই লালবাজারের সাইবার শাখায় অভিযোগ করেন তরুণী।
মুম্বইয়ের ওই বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চালনি। শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি প্রথম শুনলেন। তবে কলকাতার নামী পরিচালকও নিজের পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে চান না। তাঁর বক্তব্য, “এত কম টাকা নিয়ে এই সব করা হচ্ছে যখন, তখন ব্যাপারটা আমাকে বদনাম করার জন্যও হতে পারে। আবার পুলিশকে চিঠি দেব।”
লালবাজারের সাইবার শাখা সূত্রের খবর, তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওই ‘ফ্যান পেজ’টি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কলকাতার পরিচালক আগে যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি এই ক্ষেত্রেও জড়িত কি না।