ফাইল চিত্র।
লকডাউনে টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে পরিষেবা চালু করতে চলেছে মেট্রো। সব রকম বিধি মেনে মেট্রো কী ভাবে চলবে, তা ঠিক করতে একটি আদর্শ আচরণবিধি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। সেই আচরণবিধির খসড়া কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছেছে। ওই নির্দেশিকা নিয়েই আজ, বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের মুখ্যসচিব লোকাল ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি ওঁরা (মেট্রো কর্তৃপক্ষ) ১৫ তারিখ থেকে মেট্রো চালানোর চেষ্টা করছেন। স্যানিটাইজ় করা ছাড়াও একটা পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে ওঁরাই সিদ্ধান্ত নিন, আমরা তো স্বাগত জানিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ট্রেন চালাতে। তার পরে মুখ্যসচিব কথা বলবেন। একসঙ্গে সম্ভব নয়। দফায় দফায় করা হবে।’’
নবান্ন সূত্রের খবর, মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে শহরতলির ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে। করোনা আবহে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়েই যাতে পরিষেবা চালানো হয়, তার জন্য একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের তৈরি করা ছ’পাতার আচরণবিধিতে। সেখানে বলা হয়েছে, যাত্রীদের মোবাইলে আরোগ্য সেতু অ্যাপ থাকাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই ব্যবস্থা কার্যকর হলে শুধুমাত্র যাঁদের স্মার্টফোন রয়েছে, তাঁরাই মেট্রোয় চড়ার সুযোগ পাবেন। যাত্রীদের একটি বড় অংশই এর ফলে মেট্রো ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। কেন্দ্রের তৈরি করা আচরণবিধিতে কামরায় যাত্রী-সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া না হলেও বলা হয়েছে, স্টেশন চত্বর ও প্ল্যাটফর্মের সর্বত্র এক মিটার অন্তর দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। এ ছাড়া, ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে সীমিত সংখ্যক প্রবেশপথ খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করুন: জিএসটি ইস্যুতে মোদীকে চিঠি দিদির
ওই আচরণবিধিতে আরও বলা হয়েছে, মেট্রো স্টেশনগুলিতে শুধুমাত্র বয়স্ক যাত্রীরাই যাতে লিফট ব্যবহার করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ-ও দেখতে হবে, লিফটে একসঙ্গে তিন জনের বেশি যাতে না ওঠেন। লিফট, এসক্যালেটর-সহ যে সব জায়গায় যাত্রীদের ঘন ঘন হাত পড়ে, সেগুলি প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর স্যানিটাইজ় করতে বলা হয়েছে। মেট্রো সূত্রের খবর, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর রাজ্যে সাপ্তাহিক লকডাউন হয়ে যাওয়ার পরে পরিষেবা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই পরিষেবা মিলবে। রবিবার মেট্রো বন্ধ থাকতে পারে। রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে মেট্রোকর্তারা এই সব প্রস্তাব রাখতে পারেন। এ প্রসঙ্গে এক মেট্রোকর্তা বললেন, ‘‘দূরত্ব-বিধি মেনে পরিষেবা দেওয়ার জন্য কিছু পরিকল্পনা করেছি। সব কিছুই চূড়ান্ত হবে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকের পরে।” মেট্রোর তরফে দু’-তিন জন আধিকারিক বৈঠকে থাকতে পারেন।
সপ্তবিধি
• যাত্রীদের মুখে মাস্ক ও ফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপ থাকা বাধ্যতামূূলক।
• স্টেশনে এক মিটার অন্তর দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করতে হবে।
• কামরা ও স্টেশনের তাপমাত্রা থাকবে ২৪-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
• চার ঘণ্টা অন্তর লিফটের বোতাম ও এসক্যালেটর স্যানিটাইজ় করতে হবে। দিনের শেষে রেক ও স্টেশনও স্যানিটাইজ় করতে হবে।
• যাত্রীর উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
• যাত্রী সচেতনতায় স্টেশনে নিয়মিত ঘোষণা করতে হবে।
• প্রান্তিক স্টেশনে কিছু ক্ষণ খোলা থাকবে ট্রেনের দরজা।
মেট্রো সূত্রের খবর, প্রথমে ট্রেনের সংখ্যা কম রাখার কথা ভাবা হলেও যাত্রী-সংখ্যার কথা মাথায় রেখে দু’টি ট্রেনের মাঝে সময়ের ব্যবধান কমানো হতে পারে। যাত্রীদের ধীরেসুস্থে ওঠানামার সুযোগ করে দিতে প্ৰতিটি স্টেশনে মেট্রো থামার সময় ১০-১৫ সেকেন্ড বাড়ানো হতে পারে। তবে ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে ওই সময়টা কমিয়ে আনা হবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে মেট্রোর অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। মেট্রো জানিয়েছে, দ্রুত ওই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।