Kolkata Metro

 একাধিক স্টেশনের ভার এক জন সুপারকে, মেট্রোর সিদ্ধান্তে বিতর্ক

মেট্রোকর্তাদের একাংশের যদিও ব্যাখ্যা, স্টেশন সুপারদের কাজ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করা। তাঁদের যুক্তি, এক জনকে দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কাজের চাপ লাঘব করা হয়েছে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৮:০১
Share:

কলকাতা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।

কর্মী-সঙ্কট সামাল দিতে কলকাতা মেট্রোর একাধিক স্টেশন পরিচালনার ভার এক জন করে স্টেশন সুপারের উপরে ন্যস্ত করার নির্দেশ জারি করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এর আগে নিউ গড়িয়া-রুবি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ এবং হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড রুটে খানিকটা রীতি ভেঙে এই ব্যবস্থা চললেও এ বার সব ক’টি মেট্রোপথেই তা চালু করতে চলেছেন তাঁরা। যা নিয়ে কর্মী মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। স্টেশন সুপারদের বড় অংশের আশঙ্কা, নতুন এই ব্যবস্থা স্টেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং গুণমান তো বাড়াবেই না, বরং বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে দৈনন্দিন পরিষেবায়।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন, অর্থাৎ, গত মঙ্গলবার জারি হওয়া ওই নির্দেশে উত্তরে বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর, দমদম-বেলগাছিয়ার মতো স্টেশনের দায়িত্ব এক জন সুপারকে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণে একমাত্র কবি সুভাষ ছাড়া সব ক্ষেত্রেই দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব এক জনের উপরে পড়েছে। একই পন্থা অনুসরণ করা হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট, নিউ গড়িয়া-রুবি এবং জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোয়।

মেট্রোকর্তাদের একাংশের যদিও ব্যাখ্যা, স্টেশন সুপারদের কাজ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করা। তাঁদের যুক্তি, এক জনকে দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে কাজের চাপ লাঘব করা হয়েছে। অতীতে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় স্টেশন-পিছু এক জন করে সুপার ছিলেন। তাঁদের অধীনে কাজ করতেন স্টেশন মাস্টার বা ট্র্যাফিক সুপারভাইজ়ারেরা।

Advertisement

বছর দুয়েক আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পথের আটটি স্টেশন পরিচালনার ভার দেওয়া হয় এক জন সুপারকে। চলতি বছরে ওই মেট্রোর হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে চারটি স্টেশনও এক জন সুপারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। একই ভাবে নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোপথের সব ক’টি স্টেশন পরিচালিত হচ্ছে কবি সুভাষ থেকে। কিন্তু স্টেশন সুপারেরা জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থায় দূরের কোনও স্টেশনে বড় ধরনের অঘটন ঘটলে তাঁদের পক্ষে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া বহু ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখানে পৌঁছতেই অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।

মেট্রোর আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় প্ল্যাটফর্মের স্ক্রিন ডোর-সহ একাধিক আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সেখানে বিপত্তির আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে কম। কিন্তু উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় সুরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক ব্যবস্থা হয় অনুপস্থিত, কিংবা থাকলেও পুরনো প্রযুক্তির। এমন পরিস্থিতিতে দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব এক জন সুপারকে দিলে ঝুঁকি থেকে যায়। আচমকা ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কিংবা যাত্রী-বিক্ষোভ তৈরি হলে সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্টেশন সুপারদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

রাজ্যের শাসকদল-ঘনিষ্ঠ ‘প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মেট্রোকর্তারা বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন, স্টেশন পরিচালনা আর স্টেশন পরিদর্শন এক নয়। স্টেশন পরিচালনার জন্য নিবিড় মনঃসংযোগ লাগে।’’ মেট্রোকর্তাদের অবশ্য দাবি, এক জনকে দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব দেওয়ায় পরিচালন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement