ফাইল ছবি
মেলা আয়োজনের অনুমতি থাকলেও বৈদ্যুতিক নাগরদোলার কোনও অনুমতি ছিল না। বেআইনি ভাবেই পার্কে নাগরদোলা এনে চলছিল রথের মেলা। রবিবার রাতে সেই চলন্ত নাগরদোলার উপর থেকে পড়ে যান এক তরুণী। এন্টালির ওই ঘটনায় তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম চিত্তরঞ্জন সাহা, মহম্মদ ওসমান ও বৈদ্যনাথ বাছার। বৈদ্যনাথ রামলীলা ময়দানে ওই বৈদ্যুতিক নাগরদোলার ‘অপারেটর’ হিসাবে কাজ করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বিনা অনুমতিতে মেলায় বৈদ্যুতিক নাগরদোলা চললেও দুর্ঘটনার আগে কেন তা কারও নজরে পড়ল না?
স্থানীয় সূত্রের খবর, বন্ধুদের সঙ্গে নাগরদোলায় উঠেছিলেন প্রিয়াঙ্কা সাউ নামে ওই তরুণী। কয়েক পাক ঘোরার পরে আচমকাই নাগরদোলা থেকে পড়ে যান তিনি। মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। দ্রুত তাঁকে এন আর এসে ভর্তি করানো হয়। আপাতত সেখানেই প্রিয়াঙ্কা চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার পরে বিভিন্ন মহল থেকে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিয়মানুযায়ী, কোনও মেলা বা উৎসবে ছোটদের জন্য নাগরদোলা নিয়ে আসা হলে তার ‘ফিট সার্টিফিকেট’ স্থানীয় থানায় জমা দিতে হয়। কোনও বিশেষজ্ঞ ওই শংসাপত্র দেন। তার পরে মেলা কর্তৃপক্ষ সেই শংসাপত্র জমা দেন থানায়। কিন্তু বাস্তবে এর কোনও কিছুই মানা হয় না বলে অভিযোগ। উল্টে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে বসানো হয় বড় বড় বৈদ্যুতিক নাগরদোলা। শিয়ালদহের কাছে রামলীলা ময়দানে রথের মেলাতেও সে ভাবেই ওই নাগরদোলা আনা হয় বলে অভিযোগ।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতার কোনও পার্কে বৈদ্যুতিক নাগরদোলা বসানোর অনুমতি দেওয়া হয় না। ২০০৮-এ দুর্গাপুজোর সময়ে দেশপ্রিয় পার্কে নাগরদোলা থেকে পড়ে এক যুবক গুরুতর আহত হন। তার পরেই বৈদ্যুতিক নাগরদোলার ক্ষেত্রে পুরসভা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রথের মেলায় কী ভাবে বৈদ্যুতিক নাগরদোলা চলছিল? কেন তা কারও নজরে পড়ল না? এই ঘটনার পরে পুরসভা থানায় লিখিত অভিযোগ করবে হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রতি বছর রামলীলা ময়দানে প্রায় এক মাস ধরে রথের মেলা চলে। এ বছরেও সেই মেলার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তবে বৈদ্যুতিক নাগরদোলা রাখা নিয়ে কোনও তথ্য তাদের জানানো হয়নি বলেই পুরসভার দাবি। পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধু মেলারই অনুমতি ছিল, নাগরদোলার কোনও অনুমতি ছিল না।’’
তবে এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। রামলীলা ময়দানে ওই নাগরদোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ময়দানেও রথের মেলা বসেছে। তাই শহরের আর কোনও মেলায় বৈদ্যুতিক নাগরদোলা চলছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। প্রতিটি থানাকে এ বিষয়ে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই মেলায় সব ধরনের নাগরদোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরের আর কোনও মেলায় নাগরদোলা চলছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে প্রতিটি ডিভিশনে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’’