জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে বৃদ্ধের দেহ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
আটচল্লিশ ঘণ্টার ব্যবধানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিংয়ের কাছে প্রায় ঘণ্টাখানেক করোনা সন্দেহভাজন এক বৃদ্ধের দেহ পড়েছিল। সে দিন স্ট্রেচারও পাননি মৃত বৃদ্ধ। রবিবার জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে থাকা মৃত বৃদ্ধ স্ট্রেচার পেলেও কোভিড হাসপাতালে মৃতের অসম্মান কবে আটকানো যাবে, সেই উত্তর এ দিনও মিলল না।
স্বাস্থ্য ভবনের চিকিৎসক-আধিকারিকদের একাংশের মতে, সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) রোগীদের মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেই মৃতদেহের প্রতি অনাদরের একের পর এক ঘটনায় বাড়ছে বিড়ম্বনা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ রামপ্রসাদ সাউ নামে ওই রোগীকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে পৌঁছয়। সঙ্গে ছিলেন বৃদ্ধের ছেলে। হাসপাতালের এক রক্ষীর কথায়, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি বললেন, আমার বাবাকে বাঁচান!’’ অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে তখন শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন বৃদ্ধ। জরুরি বিভাগের বাইরে থাকা রক্ষীদের একটি স্ট্রেচার দিতে অনুরোধ করেন ছেলে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীকে জরুরি বিভাগের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ওই বিভাগের চিকিৎসক বাইরে এসে যখন রোগীকে দেখেন, তখন তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে তত ক্ষণে অন্য রোগী নিয়ে চলে গিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সটিও।
আরও পড়ুন: নেই নতুন আক্রান্ত, রেড থেকে গ্রিন জ়োনে বেলগাছিয়া বস্তি
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের বক্তব্য, ক্রন্দনরত অবস্থায় ফোনে কথা বলতে বলতে হাসপাতাল ছাড়েন ছেলে। সেই সময়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের তিনি বলে যান, গাড়ির খোঁজে যাচ্ছেন। কিন্তু আড়াই ঘণ্টা পরেও ছেলে ফেরেননি। তত ক্ষণ জরুরি বিভাগের বাইরে খোলা আকাশের নীচে স্ট্রেচারেই পড়েছিল দেহটি। ঘণ্টাখানেক পরে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় সেই ছবি বন্দি হলে কর্তব্যরত রক্ষীদের মধ্যে ছেলের খোঁজে তৎপরতা শুরু হয়। কেন মৃত ব্যক্তির নাম এবং তাঁর পরিজনের মোবাইল নম্বর নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে শুরু হয়ে যায় কাটাছেঁড়া।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিষয়টি রাজ্যের মন্ত্রী তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির নজরে আসে। মৃতের আত্মীয়ের খোঁজে তৎপরতা আরও বাড়ে। হাসপাতালের প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এর পরেই হাসপাতালের এক ঠিকাকর্মী মৃতের মুখ ঢেকে দেহটি জরুরি বিভাগের ভিতরে নিয়ে যান।
প্রশ্ন হল, প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেহটি বাইরে পড়ে রইল কেন? কলকাতার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নজরদারির কাজে একটি কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এ দিন সেই কমিটিতে কিছু বদল এনে এম আর বাঙুর এবং আমরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসএসকেএমের চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালিকে। কিন্তু কমিটি গড়েও কেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতালে মৃতদেহের অসম্মান আটকানো যাচ্ছে না?
উল্টো দিকে মৃতের পরিজন কেন বেপাত্তা হয়ে গেলেন সেই প্রশ্নও তাৎপর্যপূর্ণ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক সময়ে ফোন নম্বর জোগাড় করে মৃতের পরিজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। যার প্রেক্ষিতে করোনা নিয়ে সামাজিক বিড়ম্বনার জন্য মৃতের পরিজনদের এমন আচরণ কি না, তা-ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
রোগী হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন নির্মল মাজি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে খোঁজখবর করা হয়। তখন জানা যায়, পরিজনেরা দেহ ফেলে চলে গিয়েছেন। মৃতদেহ যাতে ভিতরে রাখা হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়।’’
আরও পড়ুন: থমকে থাকা প্রকল্পের কাজ শুরুর ভাবনা