বিপাকে: শংসাপত্র জোটেনি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়ে আসছেন ক্ষুব্ধ দুই চিনা তরুণ-তরুণী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
চাকরির জন্য প্রয়োজন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের জেরে বৃহস্পতিবার সেই শংসাপত্র পেতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হলেন চিনের দুই তরুণ-তরুণী। শহরের দু’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে শংসাপত্র না পেয়ে এ দিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের বাইরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ট্রেভা চেন নামে ওই চিনা তরুণ ও তাঁর বান্ধবী।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে একটি বাড়িতে থাকেন ট্রেভা। দুবাইয়ে চাকুরিরতা তাঁর বান্ধবী সম্প্রতি বিয়ের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। অসুস্থতার জন্য তাঁর দুবাইয়ে ফিরতে দেরি হয়ে যায়। তাই যে সংস্থায় তিনি কাজ করেন, সেখানে জমা দেওয়ার জন্য তাঁর চিকিৎসকের শংসাপত্রের প্রয়োজন ছিল। এ দিন সেই শংসাপত্রের জন্য প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বান্ধবীকে নিয়ে যান ট্রেভা। কিন্তু সেখানে বারবার এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যেতে বলা হয় তাঁদের। বিরক্ত হয়ে তাঁরা চলে যান ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।
সেখানে অবশ্য আর এক সমস্যার মুখে পড়েন ট্রেভা ও তাঁর বান্ধবী। দুপুরের বৃষ্টির পরে মুখে মাস্ক পরে তাঁরা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ঢোকামাত্র জরুরি বিভাগে গ্রিলের সামনের ভিড় নিমেষে পাতলা হয়ে যায়। ট্রেভা ও তাঁর বান্ধবীকে দেখে গ্রিলের ও পারে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের সরকারি হাসপাতালে আসার কারণ জানতে চান। ট্রেভারের দাবি, সর্দি-কাশি হচ্ছে শুনেই তাঁর বান্ধবীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। তিনি তাঁদের জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে বেলেঘাটা আইডি’তেই। তাই তাঁদের সেখানে যেতে হবে। ট্রেভার দাবি, করোনাভাইরাস সন্দেহে যে তাঁরা হাসপাতালে আসেননি সে কথা প্রায় দশ মিনিট ধরে ওই চিকিৎসককে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু লাভ হয়নি।
ট্রেভার প্রশ্ন, ‘‘বান্ধবী তো চিন থেকে আসেননি! ও তো দুবাইয়ে কাজ করে। তাহলে কলকাতায় থাকতে থাকতে সর্দি-কাশি হলে কেন করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে?’’ ওই তরুণ-তরুণীর সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁদের এক আত্মীয়ও। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সামান্য সর্দি-কাশি হয়েছে। চাকরির কারণে সরকারি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট চাইছি। কিন্তু চিকিৎসকেরা কথাই শুনছেন না! ওঁদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ওঁরা স্থির করেই ফেলেছেন এ দেশে ভাইরাস ঢুকে গিয়েছে।’’ শেষ পর্যন্ত শংসাপত্র ছাড়াই হাসপাতাল চত্বর ছাড়েন তাঁরা।
এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সত্যিই ওই চিনা তরুণ-তরুণীর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে বলে মনে হলে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে রাখা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে নজরদারির কাজটা সহজ হত। কিন্তু সেই কাজ করা হয়নি বলেই খবর।
সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ভবনের জারি করা এক নির্দেশিকা অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারির পরে চিন থেকে যিনি বা যাঁরা এ রাজ্যে এসেছেন, তাঁদের পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও এ দেশে পৌঁছনোর পরের ২৮ দিন পর্যন্ত তাঁদের উপরে নজরদারি চালানোর কথা। সে দিক থেকে ওই তরুণ-তরুণীকে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মত স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশের। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা আতঙ্কের আর একটা দিক। সত্যিই এমন হলে তা ঠিক হয়নি।’’