প্রতীকী ছবি।
প্রতিটি বিমানবন্দরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তার মেডিক্যাল ইউনিট। ঠিকঠাক মেডিক্যাল ইউনিট না-থাকলে সেই বিমানবন্দরে উড়ান ওঠানামা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিতে পারে।
কলকাতা বিমানবন্দরের বর্তমান মেডিক্যাল ইউনিট নিয়ে দেখা দিয়েছে সেই প্রশ্নচিহ্ন। ২০১৩ সালে নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরে বেসরকারি সংস্থা মেডিকা এই ইউনিটের দায়িত্ব নেয়। এ বার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে তারা চিঠি দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নতুন করে দরপত্র চাওয়া হয়েছে। দু’টি বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।’’
দায়িত্ব ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে এই ইউনিট চালানোর শর্ত। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যে সংস্থা মেডিক্যাল ইউনিট চালাবে, শর্তানুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাদের টাকা দেবেন না। বরং সেই সংস্থাকেই টাকা দিতে হবে। মেডিকা যখন শুরু করেছিল, তখন মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছিল তাদের। সেটা বেড়ে পরে দাঁড়ায় মাসে দু’লক্ষ টাকা। স্বভাবতই সংস্থার অন্দরে প্রশ্ন উঠছিল, এত টাকা ভাড়া দিয়ে, চিকিৎসক ও অন্য কর্মীদের বেতন দিয়ে তাদের লাভ কোথায় হচ্ছে?
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, এত যাত্রী কলকাতা দিয়ে যাতায়াত করেন। সেখানে মেডিকা-কে পাঁচটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এটাই তাদের লাভ। এ ভাবেই চলছিল। কিন্তু করোনা আবহে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। খরচ কমাতে শুরু করে প্রতিটি বেসরকারি সংস্থা। এপ্রিল মাস থেকে মেডিক্যাল ইউনিটের জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ টাকা নেননি। কিন্তু মেডিকার যুক্তি, আট জন চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স চালক-সহ অন্য কর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে তাদের মাসে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ আয় শূন্য।
অন্য শহরে যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রী বা বিমানবন্দরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রী, উড়ান সংস্থা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মী-অফিসারদের চিকিৎসার জন্যই মূলত এই ইউনিট রাখা থাকে। এ ছাড়া কখনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটলে সেই যাত্রীদের চিকিৎসার ভারও পড়ে এই ইউনিটের উপরে। অভিযোগ, কলকাতা বিমানবন্দরে অসুস্থ যাত্রী বা কর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের কাছের চার্নক বা আইএলএসে ভর্তি করা হয়। বিমানবন্দর থেকে মেডিকার দূরত্ব বেশি বলে প্রায় কেউই যেতে চান না। মেডিকার যুক্তি, এর ফলে ইউনিট চালিয়ে লাভ হচ্ছে না তাদের।
মেডিকা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অলক রায় বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে খরচ কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। যেখানে লোকসান হচ্ছে, সেখান থেকে সরে আসছি। বিমানবন্দরে ইউনিট চালিয়ে না হচ্ছিল লাভ, না সাধারণের সেবা। তাই সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’